ফেসবুক লাইভের পর রক্তাক্ত অবস্থায় যুবকের মৃত্যু, খুনের অভিযোগ পরিবারের

আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ২৮ জানুয়ারি: “ভেঙে পড়ো না। আমার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে তোমাকে। পুনর্জন্ম বলে যদি কিছু থাকে তাহলে আবার আমি ফিরে আসব অন্য কোন বেশে”। এভাবেই মোবাইল থেকে ফেসবুকে লাইভ করে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল এক যুবকের। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই খুন, কারা খুন করল, তার তদন্ত শুরু করেছে বীরভূমের নলহাটি থানার পুলিশ।

মৃত যুবকের নাম রাজ মজুমদার (২৭)। তাদের আদি বাড়ি বীরভূমের রাজনগরে হলেও জন্ম থেকেই তারা নলহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মসজিদ মোড় সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। বাবা উত্তম মজুমদার নলাটেশ্বরী মন্দিরের সামনে চায়ের দোকান চালান। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিল রাজ। পরিবারের দাবি নেশা করত রাজ। মোবাইল লাইভে রাজ সেকথা স্বীকার করে নিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলের ড্রাগের নেশা ছাড়িয়ে সংশোধনের জন্য তাকে আসানসোলের একটি হোমে রেখে এসেছিল। দুবরাজপুর এবং আসানসোলে দুই বছর থাকার পর সে নেশামুক্তি কেন্দ্রে কাজ শুরু করে। নলহাটি ব্লক অফিসের সামনে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে রাজ কাজ করত। এরই মধ্যে এক তরুণীর সঙ্গে ভালোবাসায় আবদ্ধ হয় সে। তবে সেকথা বাড়ির কেউ জানতেন না। সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় রাজ। বুধবার দুপুরে বাবাকে ফোন করে জানায় সে দুবরাজপুর থেকে ফিরছে। উত্তমবাবু বলেন, “ছেলের ফোনের কিছু সময় পর নলহাটির বাসিন্দা রানা শেখ, জ্যোতি শেখ ও শুভজিৎ বলে রাজ ফেসবুকে আত্মহত্যার করার জন্য লাইভ করেছে। আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই। এরপর দেখি ছেলের ফোন বন্ধ। সন্ধ্যের দিকে ওই তিনজন ফের বলে রাজকে কোঠাতলার মেলায় পাওয়া গিয়েছে। আমরা উদ্ধার করেছি। আপনি কাগজে সই করলে তাকে নলহাটির নেশামুক্তি কেন্দ্রে রাখব। রাতে বলে ছেলে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে রয়েছে। ভোরের দিকে বলে ছেলে মারা গিয়েছে। নলহাটি ব্লক হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলের সাড়া শরীর ক্ষতবিক্ষত। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান প্রচণ্ড মারধর করার ফলে শরীরে রক্তক্ষরণ হয়ে ছেলের মৃত্যু হয়েছে”।

এদিকে দুপুরে ফেসবুক লাইভে বাবার উদ্দেশ্যে রাজা বলে, “আমার জন্য আর চিন্তা করো না। আমার জন্য তোমরা অনেক করেছ। কিন্তু আমি নিজেকে সংশোধন করতে পারিনি। তাই এবার ভাইকে মানুষের মতো মানুষ করে তোল”। পরিবারকে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় সে। বলে, “কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন”। প্রেমিকার উদ্দেশ্যে সে বলে, “আমার স্বপ্নপূরণ তোমাকেই করতে হবে। তুমি ভেঙে পড়ো না। যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকে তাহলে অন্য কোন বেশে পুনরায় ফিরে আসব”। ফেসবুকের এই লাইভ ভয় দেখিয়ে করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। তিন যুবকের অসংলগ্ন কথা বার্তায় তাদের প্রতি সন্দেহ বেড়েছে পরিবারের। যদিও রানা শেখ বলেন, “ওর লাইভ দেখার পর আমরা ওর বাড়িতে জানাই। সন্ধ্যের দিকে তাকে মেলা থেকে উদ্ধার করে আমাদের নেশামুক্তি কেন্দ্রে নিয়ে আসি। ভালই ছিল। কিন্তু ভোরের দিকে অসুস্থতা বোধ করায় তাকে নলহাটি ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করি। তবে কারা অকে মারধর করেছে বলতে পারব না”। পুলিশ নেশামুক্তি কেন্দ্রের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *