চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ৩০ এপ্রিল: ইবোলায় ব্যবহৃত ড্রাগ করোনা চিকিৎসায় কার্যকরী! আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ইবোলা রুখতে যে রেমডিসিভির ব্যবহৃত হয়েছিল, করোনা মোকাবিলায় সেই ড্রাগকেই গ্রিন সিগন্যাল দিতে চলেছে মার্কিন এফডিএ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে যে, এর আগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আরেক মহামারী ইবোলা রুখতে যে ধরনের ড্রাগ ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই একই ওষুধ করোনায় মরণাপন্ন রোগীদের ওপর প্রয়োগ করে সুফল মিলছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের ৭৫টি হাসপাতালে ১০০০ জন করনা আক্রান্তের ওপর এই ড্রাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে অন্তত ৩১ শতাংশ রোগী দ্রুত সেরে উঠেছেন। অর্থাৎ, যদি একজন রোগীর সেরে উঠতে ১৫ দিন সময় লাগে, সেই জায়গায় রেমডিসিভির প্রয়োগ করলে ১১ দিনেই সেই রোগী সেরে উঠছেন বলেই গবেষকরা জানিয়েছেন। যদিও গবেষকদের একাংশ বলছেন, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুকারক সংস্থা গিলেড যে রেমডিসিভির ড্রাগ তৈরি করে, সেই ড্রাগ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য কতটা কার্যকরী, তা আরও বেশ কিছুদিন পরীক্ষা হলে স্পষ্ট করা সম্ভব হবে। তবে গুরুতর অসুস্থদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ড্রাগের সঙ্গে রেমডিসিভির প্রয়োগ করে আপাতবস্থায় সুফল মিলছে।
তবে চিনের দাবি, এই ড্রাগ প্রয়োগ করে কোনও ফল পাওয়া যায়নি। যদিও মার্কিন ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের অন্তর্গত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অন ইনফেকশাস ডিসিজের প্রধান তথাচিকিৎসক অ্যান্থনি ফুঁসি জানিয়েছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেমডিসিভির প্রয়োগ সুফল দিয়েছে। এটি খুবই ভালো খবর।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা যা বুঝতে পারছি তাতে এই ড্রাগ ব্যবহার করলে মানবদেহে এই ভাইরাসের প্রজনন আটকানো সম্ভব।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, অ্যাডাপটিভ কোভিড-১৯ ট্রিটমেন্ট ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, মরণাপন্ন একজন রোগীর দেহে ১০ দিন ধরে একফোঁটা মাত্রায় এই রেমডিসিভির প্রয়োগ করায় সুফল মিলছে। প্রাথমিকভাবে ৪৪০ জনের দেহে এই ড্রাগ ব্যবহার করার পরিকল্পনা হলেও, পরবর্তীতে ভালো ফল পাওয়ায় দ্বিগুণ মাত্রায় এই ড্রাগের প্রয়োগ করা হয়েছে। এইবার মার্কিন (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এফডিএর ছাড়পত্র পেলে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ওপরে রেমডিসিভির ব্যবহার করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট দেশের স্বাস্থ্যকর্তারা।
আশা করা যাচ্ছে, যেভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই ইবোলা প্রতিরোধক ড্রাগ করোনায় ব্যবহার করছেন, সেখানে খুব শীঘ্রই এই ড্রাগ মার্কিন এফডিএ-এর ছাড়পত্র পাবে। তবে এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী এই ড্রাগের চাহিদা যে পরিমাণে তৈরি হয়েছে, তাতে তা সামাল দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু, সবচেয়ে বড় বিষয় হল, রেমডিসিভিরের সুফল সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া যাবে, সেটা এখনই মানতে নারাজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ফলে ইবোলা প্রতিরোধক আদৌ করনা প্রতিরোধক হয়ে উঠবে কি না, সে বিষয়ে এখনও বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।