সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৭ এপ্রিল:
বাঁকুড়া জেলাজুড়ে বুনো হাতির আক্রমণের সমস্যা মিটতে না মিটতেই এবার জংলি হনুমানের তাণ্ডব শুরু হয়েছে উত্তর বাঁকুড়ার জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে। বৃহস্পতিবার সকালেই হনুমানের আক্রমণে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধের। ঘটনাটি ঘটেছে গঙ্গাজলঘাঁটি থানার ছোট লালপুর গ্রামে। এলাকাটি বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের মেজিয়া রেঞ্জ এলাকার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম কানাই কুন্ডু(৮২)।
এই মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামের বাসিন্দা পার্বতী চরণ মণ্ডল বলেন, কানাইবাবু এদিন সকালে গ্রামের একটি মুদির দোকানের বারান্দায় বসেছিলেন। তারপর গ্রামের মানুষদের সঙ্গে গল্পগুজব সেরে সকাল ৮ :১৫ নাগাদ মুদির দোকান থেকে একটি পাউরুটি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। গ্রামের ভিতরের গাছে গাছে অসংখ্য হনুমান রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। আচমকা একটা বীর হনুমান গাছ থেকে নেমে কানাইবাবুর হাতে থাকা পাউরুটি কেড়ে নিতে গেলে তিনি হনুমানটিকে তাড়াতে যান। দাঁতমুখ খিঁচিয়ে হনুমানটি তাকে পাল্টা আক্রমণ করে পায়ের গোড়ালির পেছনের অংশ কামড়ে ধরে। কানাই বাবু চিৎকার করতে থাকেন। তখনই হনুমানটি গোড়ালির শিরা কেটে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। গ্রামের বাসিন্দারা এসে জড়ো হলে অনুমানটি লাফ দিয়ে গাছে উঠে যায়। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পনেরো-কুড়ি মিনিটের মধ্যে তিনি জ্ঞান হারান। পুলিশে খবর দেওয়া হলে গঙ্গাজলঘাঁটি থানার পুলিশ এসে তাকে অমরকানন হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জেলার পরিবেশবাদী সংস্থা মাই ডিয়ার ট্রিজ এন্ড ওয়াইল্ডস এর সম্পাদক ঝর্ণা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, হনুমানের বসবাস ও আশ্রয়ের জন্য বহু শাখা বিশিষ্ট বড়ো বড়ো গাছ এখন জঙ্গলে নেই। শুশুনিয়া পাহাড়ে ওরা নিরাপদে থাকে। কিন্তু কিছু অসচেতন মানুষ সেই পাহাড়েও আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। জঙ্গলে ঝরা পাতার মরশুমে আগুন ধরিয়ে তামাশা দেখছে। ঝর্না গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, জেলার জঙ্গলে ১০ দিন ধরে আমরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি জঙ্গলে খাবারের অভাব, জল নেই, আগুন ঝোপঝাড় পুড়ে পরিস্কার হয়ে গেছে। বহু সাপ, সরিসৃপ, কীটপতঙ্গ, পাখি মারা পড়েছে। ফলে হাতি, বানর, সাপ লোকালয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। বন দফতরকে আরো বেশি করে উদ্যোগ নিতে হবে মানুষকে সচেতন করতে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলার হাতি সমস্যা সমাধানের জন্য গড়ে ওঠা সংগঠনের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখার্জি বলেন, বনকর্তাদের উদাসীনতার কারণে জঙ্গল কেটে সাফ হয়ে যাচ্ছে। জল ও খাবার নেই। বন্য প্রাণীকূল কোথায় যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তিনি বলেন, হাতির আক্রমণে মৃত্যু হলে যেভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এক্ষেত্রেও মৃতের পরিবারকে অবিলম্বে ৫ লক্ষ টাকা ও একজনকে চাকরি দিতে হবে।
গঙ্গাজলঘাঁটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিমাই মাজি বলেন, যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় তার সব রকম ব্যবস্থা করার জন্য জেলা বনাধিকারিককে জানিয়েছি।
সংশ্লিষ্ট মেজিয়ার রেঞ্জ অফিসার দুর্গাদাস হাঁসদা জানান, জঙ্গল এবং শুশুনিয়া পাহাড়ে আগুন লাগার ফলে অসংখ্য হনুমান বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গ্রামগুলিতে ঢুকে পড়েছে। যে হনুমানটির আক্রমণে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে সেই বানরের গায়ে কেউ লাল রঙ ঢেলে দিয়েছে। ফলে তাকে অন্য বানররা দলে নিচ্ছে না। সেই কারণে হনুমানটি ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এদিন আমরা বানরটিকে ঘুম পাড়ানি গুলি করে খাঁচাবন্দি করতে পেরেছি। দুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মৃতের পরিবারকে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

