আমাদের ভারত, ১ ফেব্রুয়ারি: বারানসীর জ্ঞানব্যাপী মসজিদে সিল করা তহেখানায় হিন্দুদের পুজো করার অনুমতি দিয়েছিল বারানসী আদালত বুধবারেই। বিচারকের সেই নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হলো সেখানে আরতি ও পূজার্চনা। বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যারিকেড সরিয়ে “ব্যাস কা তহেখানা”কে পুজোর জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তারপরেই প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়। সূত্রের খবর, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ভক্তদের জন্য ভূগর্ভস্থ ঐ কক্ষ খুলে দেওয়া হতে পারে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে দৈনিক পুজো আরতি হবে জ্ঞানব্যাপীর তহেখানায়। ভোর সাড়ে তিনটেতে মঙ্গল আরতি, দুপুর ১২ টায় ভোগ, বিকেল চারটেয় অপরাহ্ন, সন্ধে সাতটায় সায়াহ্নেন কাজ এবং রাত সাড়ে দশটায় স্বয়ন। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জ্ঞানব্যাপী লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিত পূজার্চনা করেছেন বৃহস্পতিবার।
মসজিদে দুটি তহেখানার মধ্যে একটিতেই হিন্দু ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বারানসী জেলা আদালত। জ্ঞানব্যাপী মসজিদ লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের বিখ্যাত নন্দী মূর্তির মাত্র কুড়ি ফুট দূরেই রয়েছে “ব্যাস কা তহেখানা”। এছাড়াও আরো একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষেও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে বলে দাবি হিন্দু পক্ষের। যদিও বারানসী আদালত এখনো সেখানে পুজো করার অনুমতি দেয়নি। পুজো করার অনুমতি দেওয়া হয়নি সিল করা ওজুখানাতেও।
২০২২ সাল থেকে আদালতের নির্দেশে মসজিদের ওজুখানা অংশটি সিল করে রাখা হয়েছে। স্বয়ম্ভু জ্যোতির লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর নামে পরিচিত ওই অংশে প্রাচীন শিবলিঙ্গ পেয়েছে বলে দাবি হিন্দু পক্ষের। অন্যদিকে মসজিদ কমিটি সেটিকে ফোয়ারা বলেছে। সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে ওজুখানায় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হোক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক খননের অনুমতি দেওয়া হোক। মুসলিম পক্ষের দাবি, মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার দাবি ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থান রক্ষা আইনের পরিপন্থী।
নন্দী মূর্তির কয়েক ফুট দূর থেকে শুরু হচ্ছে জ্ঞানব্যাপী মসজিদের পরিসর। মাঝখানে অস্থায়ী ধাতব বেড়াও রয়েছে। মসজিদের মূল গেট ব্যবহার না করে হিন্দু ভক্তদের জন্য ওই বেড়া সরিয়ে ব্যাস কা তেহেখানায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা হতে পারে।
জ্ঞানব্যাপী মসজিদে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার যে রিপোর্ট আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জমা দিয়েছে তার ভিত্তিতে আদালত বুধবার যে রায় ঘোষণা করেছে আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির তরফে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হতে পারে।
হিন্দু পক্ষের দাবি, ব্যাস কা তেহেখানা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাস পুরোহিত বংশের দখলে ছিল। তারা একসময় ওখানে বসবাস করতেন। শৈলেন্দ্র কুমার ব্যাস নামে ওই বংশের পুরোহিত আদালতে জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালের গোরা পর্যন্ত তারা ওখানে পুজো করেছেন। ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর উত্তেজনা এড়াতে উত্তরপ্রদেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মূলায়ম সিং যাদব সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন পুরোহিত ছিলেন সোমনাথ ব্যাস। শৈলেন্দ্র, সোমনাথের উত্তরাধিকারী হিসেবে আবার পুজো করার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। রিসিভার হিসেবে নিয়োগ করার আবেদনও করেন। জ্ঞানব্যাপীতে পুজো করার অনুমতি চেয়ে স্থানীয় ৫ হিন্দু মহিলার তরফে আদালতে পৃথক আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মামলার সূত্রেই জ্ঞানব্যাপীতে এএসআই সমীক্ষা ও আরতি পূজার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।