রাজেন রায়, কলকাতা, ১৭ আগস্ট: রাজ্যের অন্যতম প্রশাসনিক পরিকাঠামোর অংশ পুলিশ বিদ্রোহ করলে কী সমস্যা হতে পারে, করোনা যুদ্ধের সময় পর পর তিন বার পুলিশি বিদ্রোহে সেই বিষয়টি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় বিদ্রোহী পুলিশদের বদলি করে দিলেও বিষয়টি যে সহজে মিটবে না তাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই এবার পুলিশের ক্ষোভ নিরসনে সোমবার নবান্ন থেকে সারা রাজ্যে পুলিশ ওয়েলফেয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ঘোষণা-সহ পুলিশ দিবস ঘোষণা, মহিলা পুলিশদের পুরুষ পুলিশের সমান পদোন্নতির মত একাধিক ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “পুলিশকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখা উচিত আমাদের। তাঁদের পরিবারের ভালমন্দ ভাবার দায়বদ্ধতা আছে আমাদের। তাঁদেরও নানা সুবিধা-অসুবিধা থাকতেই পারে। তাঁরা কোথায় বলবেন? এগুলো দেখা আমাদেরই দায়িত্ব। এর আগেও ২০১২ সালে আমরা ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরি করেছিলাম, সেই বোর্ড সাধ্যমতো কাজ করেছে। এবার আবারও আমরা পুলিশের সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর জন্য ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরি করলাম। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওই বোর্ড কাজ শুরু করবে। প্রত্যেক জেলার এসপি-দের ওই বোর্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অনুরোধ করব।” শান্তনু সিনহা বিশ্বাস নামে এক আমলাকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
একই সঙ্গে তিনি জানান, সাম্প্রতিক কোভিড পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেমে লড়াই করেছেন পুলিশকর্মীরা। করোনার সময় লকডাউনে রাজনৈতিক মিটিং মিছিল বারণ থাকলেও অনেক রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপের কারণে পুলিশকর্মীরা করোনার শিকার হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ১৮ জন পুলিশকর্মী শহীদও হয়েছেন। তাঁদের সাহসিকতাকে সম্মান জানাতে ১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে এবার থেকে পুলিশ দিবস হিসেবে পালন করবে সরকার। ওই দিনটিকে সম্মান জানিয়েই ওই দিন থেকেই সারা রাজ্যে পুলিশ ওয়েলফেয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড কাজ শুরু করবে।
এর পরেই মমতা ঘোষণা করেন, কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের মহিলাদের পদোন্নতির সুযোগ বাড়ানো হবে। বাহিনীতে মহিলা পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় এক সঙ্গে এক বছরে ঢুকেও পদোন্নতিতে দেরি হত মহিলা পুলিশের। সেই সমস্যা মেটাতে এবার তৈরি করা হচ্ছে কমন গ্রেডেশন সিস্টেম। তাতে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা পুলিশরাও সমানাধিকার পাবেন এবং একই সঙ্গে প্রোমোশন পাবেন মহিলা পুলিশরাও। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পুলিশের অভিন্ন ক্যাডার তালিকা তৈরি হবে। পুলিশের সংক্রমণ ঠেকাতে শহরে পুরনো ব্যারাক গুলির উন্নয়ন ছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে নতুন ২০টি ব্যারাক তৈরি করা হবে, ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্যের সমস্ত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন এবং যৌনকর্মীদের জন্য ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর ২০২১ জুন পর্যন্ত তারাও যাতে বিনামূল্যে রেশনিং ব্যবস্থার সুবিধা পান, সেটা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যম থেকে দু’জন করে অ্যাক্রেডিটেড বা সরকার স্বীকৃত কোভিড যোদ্ধা সাংবাদিককে ১ সেপ্টেম্বর সম্মান দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, সাংবাদিকদের কেউ করোনায় মারা গেলে তার পরিবারের কাউকে চাকরির বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে।

