সাতবছর ধরে নিখোঁজ, মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মহিলাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নজির বালুরঘাট চকভৃগু শনিপূজা কমিটির

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৫ নভেম্বর: বালুরঘাটের চকভৃগু শনি পূজা মন্ডপ কমিটির সহায়তায় দীর্ঘ সাত বছর পর বাড়ি ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক ভবঘুরে মহিলা। বৃহস্পতিবার কমিটির সদস্যরা শেফালী বর্মন নামে ওই মহিলাকে মালদা জেলার গাজলের ময়না জগদ্দলপুরে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন। মন্ডপ কমিটির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চকভৃগুতে শনিপুজোর পাশাপাশি মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরেদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন পুজো কমিটির সদস্যরা। প্রতিদিন সেখানেই রান্না করে দুবেলা খাবার দেওয়া হয় ওই সব অসহায় ভবঘুরে মানুষদের। প্রায় দু বছর আগে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন গাজোলের বাসিন্দা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে দুপুর এবং রাতে মন্ডপ কমিটির কাছেই খাবার খেতেন তিনি। বর্তমানে প্রায় ৬০ জন অসহায়, ভবঘুরে মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা হয় ওই পুজো মন্ডপ থেকেই। দীর্ঘদিন মহিলা কথা বলতে না পারলেও সম্প্রতি সে তার বাড়ির ঠিকানা জানায় পুজো কমিটির সদস্যদের। যার পরেই মন্ডপ কমিটির তরফে নিতিশ দাস গাজোলের ময়না জগদ্দলপুরে গিয়ে সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এদিন পুলিশের অনুমতি নিয়ে দুপুরে খাইয়ে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে ভবঘুরে ওই মহিলাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন চকভৃগু শনিপুজো কমিটি। সাতবছর ধরে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলাকে তার পরিবারের কাছে চকভৃগুর শনিপূজা কমিটির এমন ফেরানোর উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানাগেছে, ভবঘুরে ওই মহিলার স্বামী নিখোঁজ হবার পর থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন শেফালী বর্মন নামে ওই মহিলা। জয়া বর্মন নামে বছর চৌদ্দর একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে তার। মা ভবঘুরে হয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় মাসীর কাছে থেকেই বড় হয়েছে ছোট্ট জয়া। গাজোলের ময়না জগদ্দলপুরে শেফালীর বাবা গোপাল ও ভাই গৌরাঙ্গ থাকেন। যেখানেই তার বাবার হাতে মেয়ে শেফালীকে তুলে দিয়ে আসেন চকভৃগু শনিপুজো কমিটি।

নিতিশ দাস জানিয়েছেন, পুজো মণ্ডপ থেকে যা অর্থ সংগ্রহ হয় তা দিয়ে পুজোর পাশাপাশি অসহায় ভবঘুরে মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। দুবেলাতেই ভবঘুরেরা নির্দিষ্ট সময় চলে আসেন সেখানে। তবে তাদের এখানে থাকার কোন জায়গা নেই। ফলে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয় ওই সব মানুষদের। শেফালী বর্মন আগে কথা না বললেও পরবর্তীতে তার কাছে পরিবারের খোঁজ মেলায় তাকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

কৌশিক চক্রবর্তী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিনই প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট জন ভবঘুরে এখান থেকে খাবার সংগ্রহ করে। এসবের মাঝে সেইসব ভবঘুরেদের সাথে কথা বলে তাদের বাড়ি ফেরানোর যে উদ্যোগ তা যথেষ্টই প্রশংসনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *