পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ ফেব্রুয়ারি: কেন্দ্র ও রাজ্য বাজেটে বহু প্রতিক্ষীত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং সেখাওয়াত ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ অন্তর্বর্তী কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ওই প্রকল্পের বিষয়ে কোনো কথা না বলায় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় ২০ লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও দেবাশীষ মাইতি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তেরোটি ব্লকের স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রায় কুড়ি লক্ষাধিক অধিবাসীকে প্রতি বছরের বন্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে পরিকল্পনা করা হয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার নানা অজুহাতে টালবাহানা করে এখনো পর্যন্ত তাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ করেনি। ফলস্বরূপ দুই জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যেক বছর বর্ষার সময় সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ২০১৫ সালে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন (জি.এফ.সি.সি) ও কেন্দ্রীয় সরকারের জলসম্পদ দপ্তরের ছাড়পত্র পায়। এরপর কেন্দ্র ও রাজ্য কোনো সরকার এই মেগা প্রকল্পের জন্য কত শতাংশ টাকা দেবে তা নিয়ে চলছে দড়ি টানাটানি। ইতিমধ্যে প্রতি বছরের বন্যা কিন্তু চলছেই। বরং বন্যার ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে।
নারায়ণবাবু এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, গত ২০২২ সালে প্রকল্পটি কেন্দ্রের ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স কমিটির ছাড়পত্র পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতারা টাকা মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে বলে ঘাটালে বিজয় সমাবেশ করেন। যেখানে কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরীও যোগ দেন। অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদলও পিছিয়ে ছিল না। তারা বলে, তারাও ইতিমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে পলসপাই, দুর্বাচটী, ক্ষীরাই, বাক্সী, ক্ষীরাই-বাক্সী, নূতন কাঁসাইয়ের নিম্নাংশ, চন্দ্রেশ্বর প্রভৃতি নদী ও খাল সংস্কার করেছেন। অথচ প্রকল্পের জন্য কোনও সরকারের পক্ষ থেকেই কোনও টাকা মঞ্জুর করা হয়নি। এই অবস্থায় আসন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করে আগামী বর্ষার পূর্বেই শীলাবতী নদীর অংশে কাজ শুরুর দাবিতে গত মাসে উভয় সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের আমরা চিঠি দিয়েছিলাম।
আমরা আশা করেছিলাম, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর আজকের বাজেট ভাষণ জেলাবাসীকে আশাহত করেছে। আমরা এ ব্যাপারে আজ সন্ধ্যায় একটি ভার্চুয়াল সভা আহ্বান করেছি। সভা থেকেই বাজেটের প্রতিলিপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ সহ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এতৎসত্বেও যদি অর্থ বরাদ্দ করে আগামী বর্ষার পূর্বে কাজ শুরু না হয়, তাহলে কমিটি বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে নারায়ণবাবু জানান।
ছবি: ফাইল থেকে