আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ৩০ অক্টোবর: অনেকটা উত্তরপ্রদেশের হাতরাসের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল বীরভূমের মল্লারপুরে। পুলিশ হেফাজতে মৃত দলিত কিশোরের দেহ পরিবারের হাতে না দিয়ে নিজেরাই দাহ করল তারাপীঠ শ্মশানে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মল্লারপুর শহরে। বিরোধীদের পাশাপাশি সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শাসক দলও। ওসির শাস্তি চেয়ে চার ঘণ্টা ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে পরিবারের লোকজন। তাদের পাশে দাঁড়ায় বিরোধীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে মল্লারপুরের বাউড়ি পাড়ায়। মৃত কিশোরের নাম শুভ মেহেনা (১৪)। বাবা গণেশ মেহেনা মল্লারপুর বাজারে সবজি বিক্রি করত। মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতেন। শুভ মাঝে মধ্যে নেশা করত বলে পুলিশের দাবি।
সপ্তমীর দিন একটি মোবাইল চুরির অভিযোগে তাকে আটক করে মল্লারপুর থানার পুলিশ। থানায় নিয়ে গিয়ে মারধরের পর সে চুরির কথা স্বীকার করে। এরপর যাকে মোবাইল বিক্রি করে সেখানে পুলিশ গিয়ে সেই মোবাইল উদ্ধার করে। সে যাত্রায় পুলিশ তাকে ছেড়েও দেয়। গত মঙ্গলবার পুলিশ ফের তাকে অন্য একটি চুরির ঘটনায় থানায় নিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগ, তাদের ছেলেকে আদালতে না পাঠিয়ে চারদিন ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে অমানুষিক মারধর করে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের মারধর করা হয়। তবে তারা কোথায় জানে না পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার ভোররাতে শুভকে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এরপরেই পুলিশ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যর সাহায্যে তার মা বাবাকে তুলে নিয়ে যায়। প্রতিবাদে সকালে থানায় বিক্ষোভ দেখান পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মল্লারপুরের বাহিনা মোড়ে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। তাদের পাশে দাঁড়ায় বিজেপি ও সিপিএম।
সিপিএমের সারাভারত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক অরূপ বাগ বলেন, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়া মারার অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের শাস্তির দাবি করছি। তাই পরিবারের আন্দোলনের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। তাদের আন্দোলনে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে”।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য অর্জুন সাহা বলেন, “ওই পরিবার আমাদের দলের সমর্থক। পুলিশ ওই কিশোরকে পিটিয়ে মেরেছে। তা না হলে ভোরের দিকে সকলের অলক্ষ্যে তাদের তুলে নিয়ে যেত না। আমরা এর সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি”।
বীরভূম জেলা পরিষদের কো-মেন্টর তৃণমূলের ধীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিভাবে পুলিশ লকআপে ওই কিশোরের মৃত্যু হল তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক। তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের সরিয়ে দিতে হবে। এটা নিন্দা করার মতো ঘটনা। সিআইডি পর্যায়ে তদন্ত হোক”।
এদিকে সকাল থেকে ওই কিশোরের মা বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল পুলিশ। সাংবাদিকদেরও ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। মৃতদেহ গ্রামে না নিয়ে গিয়ে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয় তারাপীঠ শ্মশানে। সেখানে মা ভাদুরী মেহেনাকে, “ছেলে আত্মহত্যা করেছে”। কিন্তু মৃতদেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন না কেন” প্রশ্ন করতেই তিনি কেঁদে ফেলেন। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ চাপ দিয়ে ওই পরিবারকে মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে যেতে দেয়নি।