পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ ডিসেম্বর: শুক্রবার জঙ্গল মহলের একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র আচমকা পরিদর্শন করলেন জেলাশাসক খুরশেদ আলী কাদেরী। তিনি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে কর্মীদের উপস্থিতি খতিয়ে দেখলেন। নিজে চেয়ারে বসে খতিয়ে দেখলেন রেজিস্টারে থাকা রোগীদের পরিসংখ্যান। খতিয়ে দেখলেন নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা কত। স্বাস্থ্য কর্মীদের তিনি জানান, নাবালিকাদের প্রসূতির সমস্যা বিষয়ে তারা যেন গ্রামবাসীদের বোঝান। শুক্রবার এই চিত্র দেখা গেল শালবনির জঙ্গলমহল এলাকার কর্ণগড়ের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, কেশপুর, খড়্গপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা সবথেকে বেশি। যে কারণে এই ধরনের প্রসূতিদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার পেছনে নাবালিকাদের বিয়ের বিষয়টি সব থেকে আগে সামনে এসেছে। জেলার সব থেকে বেশি নাবালিকা বিয়ের ঘটনা পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিতে। তাই ইতিমধ্যেই নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা সামনে এনে নাবালিকাদের বিয়ে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। এরপরেও তার কতটা বাস্তবায়ণ হয়েছে তা দেখতে এই পরিদর্শন জেলাশাসকের।
শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ শালবনী থানার অন্তর্গত কর্ণগড় এলাকায় হাজির হয়েছিলেন জেলাশাসক। সেখানকার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান তিনি। স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজে রেজিস্টার খতিয়ে দেখেন। সেখানে প্রসূতিদের নাম দেখে নাবালিকা প্রসূতি কত তাও হিসেব করেন। স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে তিনি জানার চেষ্টা করেন এদের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওষুধের মজুদ কতটা রয়েছে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে জেলাশাসক জানতে চান। জঙ্গলমহলের ওই এলাকাতে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। তাদের বোঝানোর চেষ্টাও যথেষ্ট হচ্ছে বলেও স্বাস্থ্য কর্মীরা জানান।
জেলাশাসক পরামর্শ দেন রূপশ্রী সহ রাজ্য সরকারের যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে তার সুবিধা সম্পর্কে নাবালিকাদের বোঝানো হোক। নাবালিকা বিয়ে ও প্রসূতি আটকাতে তৎপর হোক স্বাস্থ্য কর্মীরা।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনের পর পাশেই থাকা একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যান জেলাশাসক। সেখানে খাবারের মান পরীক্ষা করে কথা বলেন কর্মীদের সঙ্গে। তারপরে চলে যান একটি রেশন দোকানে। রেশনে দেওয়া চালের গুণমান পরীক্ষা করেন তিনি। কথা বলেন রেশন দোকানের কর্মীদের সঙ্গে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেন গ্রামবাসীরা কী কী সুবিধা পাচ্ছেন বা পাচ্ছেন না।
এদিন জেলা শাসক বলেন, “নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেই কাজ ইতিবাচক একটা প্রভাব ফেলেছে। পরিসংখ্যান অনেক কমেছে। মানুষকে সর্বস্তরের মাধ্যমে সচেতন করার কাজ চলছে। আশা রাখছি খুব শীঘ্রই সেই সংখ্যা শূন্যতে এসে হাজির হবে।”