চিকিৎসার গাফিলতিতে ৯ মাসের শিশু কন্যার মৃত্যুর অভিযোগ সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ৭ এপ্রিল: কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসার গাফিলতিতে ৯ মাসের এক শিশু কন্যার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। অভিযোগ করেছেন, কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত আনন্দময়ী তলার বাসিন্দা মৃত শিশু কন্যার মা পূজা চক্রবর্তী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৃত শিশু কন্যার নাম অতৃকা চক্রবর্তী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সকাল ১১ টার সময় সদর হাসপাতালের আউটডোরে ডক্টর সুজয় সাহা কে দেখান। তিনি বাচ্চাটিকে জেলা সদর হাসপাতালে মাতৃমাতে ভর্তি করতে বলেন। এরপর চিকিৎসা চলাকালীনই আনুমানিক রাত দশটা নাগাদ শিশুটি মারা যায়। মৃত শিশু কন্যার মা পূজা চক্রবর্তী জানান, “আমার মেয়ের খুব সর্দি লেগেছে। বুকে শ্লেষ্মা জমেছে। সেই জন্য এসেছিলাম। আউটডোরে মেয়েকে দেখালাম। সেখানে আমি ডক্টর সুজয় সাহা কে জিজ্ঞাসা করলাম, “যে স্যার ওকে কি আমি ভর্তি করাবো?” তখন উনি আমাকে জানালেন আগে ওকে ওপরে নিয়ে যান, গ্যাস দেওয়া হোক, ব্লাড টেস্ট করা হোক, তারপর আমি রিপোর্ট দেখে বলব ওকে ভর্তি করতে হবে কিনা। ওপরে নিয়ে যাওয়ার পর দু’বার গ্যাস(অক্সিজেন) দেওয়ার পর ওনার কাছে নিয়ে গেলাম। উনি বললেন ভর্তি করে দিন। ওনার কথামতো মেয়েকে ভর্তি করা হল। উনি যাবার সময় একজন নার্সকে বলে গেল ওনাকে বেড দিয়ে দিন। উনি বেরিয়ে গেলেন। কোনও নার্স আমাকে বেড দিল না। আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে একটা টুলে বসে আছি। অনেকক্ষণ হয়ে গেল বেড দিচ্ছে না দেখে আমি নিজে উঠে গিয়ে এক সিস্টারকে বললাম “দিদি আমাকে একটা বেড দিন।”

তখন আমাকে আঙ্গুলের ইশারায় একটা বেড দেখিয়ে দিল। আমি মেয়েকে নিয়ে বেডে চলে এলাম। এরপর আমরা বসেই আছি। কিন্তু কোনো চিকিৎসা শুরু হলো না। আবার কর্তব্যরত ওই দিদির কাছে গিয়ে বললাম “আমরা এতক্ষণ ধরে বসে আছি কই কিছু ওষুধ তো দিলেন না?” তখন তিনি বলেন, “গ্যাস দেওয়া হয়েছে এখন ইনজেকশন দেওয়া যাবে না পরে দেবো।” এরপর বিকেল বেলায় চ্যানেল করে ইনজেকশন দেওয়া হয়। তারপর আবার ট্রিটমেন্ট বন্ধ। রাত সাড়ে আটটার সময় যখন আবার আমি গ্যাস দিয়ে ওকে হাসপাতালের বেডে নিয়ে আসি ঠিক সেই মুহূর্তে ডাক্তারবাবু একটা ইনজেকশন দিয়ে যান। তারপর থেকেই বাচ্চার অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে লাগল। হাত পাগুলো চোখের সামনে নীল হয়ে গেল। পায়ের নিচে হাত দিতেই দেখি ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। আমি পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে ডাক্তারের কাছে গেলাম। তখন থেকে আবার চিকিৎসা শুরু করলো। তখন ওকে দেওয়া হচ্ছে ইঞ্জেকশন, মাপা হচ্ছে টেম্পারেচার, দেওয়া হচ্ছে ওষুধ, আমাকে বলা হচ্ছে ভিজে গামছা দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে।

কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও আমার বাচ্চার জ্ঞান ফিরল না। ও না ফেরার দেশে চলে গেল। শুধুমাত্র ডাক্তারের উদাসীনতায় এরকম ঘটনা ঘটলো। পূজার আক্ষেপ এই চিকিৎসাই যদি ৫ ঘণ্টা আগে হতো তাহলে আমার বাচ্চাটা বেঁচে যেত। অনেক লোকেরই তো অনেক বড় বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয় তারা বেঁচে যাচ্ছে সামান্য সর্দি বুকে জমে আমার বাচ্চা মারা গেল? পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাদের পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি এতটাই খারাপ যে বুকে সর্দি লেগে একটা বাচ্চা মারা যায়?’ তিনি বলেন, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আর যেন কোনও মায়ের কোল খালি না হয়। অভিযুক্ত ডাক্তারের শাস্তি চাই। আমি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে শুরু করে, সি এম ও এইচ, জেলাশাসক, লোকাল এমএলএ ও এমপি সবাইকে অভিযোগ জানাবো। যেন এর একটা বিহিত হয়।

এর পরেই জেলা সদর হাসপাতালে মাতৃমার চাইল্ড কেয়ার এর মধ্যেই তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। যদিও কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজয় চক্রবর্তী দাবি করেন, “বাচ্চাটির সম্পূর্ণ চিকিৎসা হয়েছে এবং বাচ্চাটির ঠান্ডা লাগার কারণে মারা গেছে।” ঘটনার তদন্তে নেমেছে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *