সেদিন অনেক জায়গায় হিন্দু হত্যা ও হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণের নেতৃত্ব দেয় মুসলমান মেয়েরা। ৭ থেকে ৭০ বছর, কোনো হিন্দু বাড়ির মেয়েকেই রেহাই দেওয়া হয়নি। মেয়ের সামনে বাবার মাথা কেটে সেই মেয়েকে বাধ্য করা হয়েছিল বাবার খুনির সাথে বিয়ে করবার জন্য। স্বামীকে হত্যা করে সিঁথির সিঁদুর পা দিয়ে মুছে সেই স্ত্রীকে বাধ্য করা হয়েছিল স্বামীর হত্যাকারীকে বিয়ে করবার জন্য। হাজার হাজার হিন্দু পুরুষকে খুন করা হয়েছিল।
শান্তনু সিংহ
আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৮ অক্টোবর: গাজায় এখন পর্যন্ত সাত হাজার তিনশো ছত্রিশ ফিলিস্তিনি মুসলমান মারা গেছে ইজরায়েলের বোমা হামলায়। কিন্তু ভারতের নতুন প্রজন্ম এখন আর অন্ধ গোঁড়ামিতে, কারো প্ররোচনায় রাস্তায় নামে না এই হত্যার প্রতিবাদে। ইসরায়েলিদের মত বাংলার যুবসমাজও আজ দৃঢপ্রতিজ্ঞ। ভেঙ্গে দেওয়া হোক এই বিষদাঁত চিরদিনের মতো। কারণ, যে ইতিহাস দীর্ঘদিন চেপে রাখা হয়েছিল অথবা ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, আজ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেই ইতিহাসের সত্যতা হিন্দু বাঙালির সামনে উপস্থিত ।
সেদিনের মত আজও আর কিছুক্ষণ পর আলোয় ভরিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে আকাশে। সমস্ত বাংলা খিলখিলিয়ে হাসবে এই আলোর তরঙ্গে। হিন্দু বাঙালির ঘরে ঘরে আজ হবে লক্ষ্মীপুজো। কোজাগরি লক্ষ্মীপূজো। বাঙালি হিন্দু, মা লক্ষ্মীকে আহ্বান করবে সমৃদ্ধির জন্য।
সমস্যা হচ্ছে, হিন্দু সংস্কৃতিতে কোথাও ঈশ্বরকে শুধু নিজের জন্য ডাকতে বলা হয়নি, তাই বাঙালি হিন্দু আজ যেমন ব্যক্তি সমৃদ্ধি চাইবে, তেমনি সমৃদ্ধি চাইবে সমগ্র মানব সমাজের জন্য-
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ, সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ্ভবেৎ।।
অন্যদিকে, ইসলামের তত্ত্বে আছে এক বিপরীত ধর্মী ঘৃণা। যারা মুসলমান নয়, তাদের সাথে বন্ধুত্বও করা যাবে না, তাদের মঙ্গল কামনা তো দুরস্ত।
[তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও| অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে| অত:পর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর| তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না । ৪-৮৯] [Should anyone follow a religion other than Islam, it shall never be accepted from him, and he will be among the losers in the Hereafter. Quran 3:85] [নিঃসন্দেহে মুশরিকরা অপবিত্র। সূরা তাওবা ২৮]আজ ১০ই অক্টোবর নয়, কিন্তু আজ কোজাগরী পূর্ণিমার দিন। কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। আজ থেকে ৭৭ বছর আগে বা সেদিন থেকে ৭৭ বছর পরেও। ১০ই অক্টোবর ১৯৪৬ এর দিনে নোয়াখালীর বাঙালি হিন্দু একইভাবে মা লক্ষ্মীর কাছে সমৃদ্ধি চেয়েছিল নিজেদের জন্য, সাথে নিজের প্রতিবেশী মুসলমানদের জন্যও। এটাই হিন্দু রীতি, হিন্দুর সংস্কৃতি, যদিও আমার মতে, দুর্বলতার প্রতীক।
১০ই অক্টোবর কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমার দিন, নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, আজকের বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান ও তার আদর্শ পুরুষ, তৎকালীন ঐক্যবদ্ধ বাংলার প্রধানমন্ত্রী (তখন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলা হত) হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর বদান্যতায মুসলমান নেতা, পাঁচবার নমাজ পড়া নামাজী গোলাম সায়োরার নেতৃত্বে মুসলমানরা নোয়াখালীর হিন্দু বাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে (এখানে উল্লেখ্য, হিন্দু হত্যা করবার সম্মানস্বরূপ, হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করবার সম্মানস্বরূপ, হিন্দুদের মুসলমানে ধর্মান্তরিত করবার সম্মানস্বরূপ নোয়াখালীর মুসলমানরা গোলাম সারোয়ারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার শ্যামপুকুরে বাড়ি মুসলমানদের তীর্থস্থান “দায়রা শরীফ” এ পরিণত করেছে,নীচে দায়রা শরীফের ছবি)।
সেদিন অনেক জায়গায় হিন্দু হত্যা ও হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণের নেতৃত্ব দেয় মুসলমান মেয়েরা। ৭ থেকে ৭০ বছর, কোনো হিন্দু বাড়ির মেয়েকেই রেহাই দেওয়া হয়নি। মেয়ের সামনে বাবার মাথা কেটে সেই মেয়েকে বাধ্য করা হয়েছিল বাবার খুনির সাথে বিয়ে করবার জন্য। স্বামীকে হত্যা করে সিঁথির সিঁদুর পা দিয়ে মুছে সেই স্ত্রীকে বাধ্য করা হয়েছিল স্বামীর হত্যাকারীকে বিয়ে করবার জন্য। হাজার হাজার হিন্দু পুরুষকে খুন করা হয়েছিল। হিন্দুদের সমস্ত সম্পত্তি লুট করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুষ্ঠু রূপে হিন্দু খুন করার জন্য এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সৈন্যবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মুসলমান কর্মীদের উপর। শত শত হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। বাঙালি হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করা যাবে এই লোভ দেখিয়ে বাংলার বাইরে থেকে আনা হয়েছিল অবাঙালি পাঠান ও পেশোয়ারী মুসলমানদের এবং তাদের রাখা হয়েছিল নোয়াখালীর বিভিন্ন গ্রামগুলিতে।
নোয়াখালী এই হিন্দু হত্যাযজ্ঞে সাহায্যকারী হিসেবে ছিল স্কুলের মুসলমান শিক্ষক, মৌলভী থেকে ইউনিয়নের সভাপতিরাও। “হয় কালেমা পড়ে গরুর মাংস খেয়ে মুসলমান হও- অথবা মৃত্যু বেছে নাও”, এই ভয় দেখিয়ে হাজার হাজার বাঙালি হিন্দুকে মুসলমান করা হয়েছিল।
নোয়াখালীর দাঙ্গায় চাটখিল, রামপুর ও দাস মেরিয়ার সমস্ত হিন্দুদের জোর করে মুসলমান করা হয়েছে। (অমৃত বাজার পত্রিকা, ১৯/১০/১৯৪৬)
তৎকালীন বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য কংগ্রেস নেতা কামিনী কুমার দত্ত জানিয়েছিলেন – নোয়াখালী দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিল, নোয়াখালীকে দার-উর-ইসলামে পরিণত করে ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের রূপরেখা তৈরি।
নোয়াখালীর এই ভয়াবহ দাঙ্গায় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে ব্যবস্থা নিতে বলা হলে তিনি জানিয়ে দিলেন, এ বিষয়ে তিনি এখনও ঈশ্বরের নির্দেশ পাননি !
( “Every since I have heard the news of Noakhali, indeed, ever since the blood bath in Calcutta, I have been wondering what my duty is God shall show me the way.”
— Amrita Bazar Patrika, 17/10/1946.)
গান্ধী আরও জানিয়ে দিলেন, আগামী ২৩শে অক্টোবর দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে তিনি মুখ খুলবেন না।
(-দ্য স্টেটসম্যান, ২০/১০/১৯৪৬)
ছবি: নোয়াখালির অসহায় হিন্দু মহিলারা।
আমি নোয়াখালী হিন্দু নিধনযজ্ঞ নিয়ে এখানে এর বেশি কিছু বলতে চাইছি না। কারণ নোয়াখালী হিন্দু নিধনযজ্ঞ নিয়ে এখন অনেক বই বেরিয়েছে, মানুষ এখন অনেক ওয়াকিবহাল। তবে গর্বের সাথে বলতে পারি নোয়াখালী দাঙ্গা নিয়ে প্রথম যে বই (যা পরিসরে খুবই ছোট) বের করা হয়েছিল তপন ঘোষের তত্ত্বাবধানে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের তরফ থেকে – “নোয়াখালী নোয়াখালী”।
আমি যে বিষয়ে আলোচনা করতে চাইছি সেটা হচ্ছে, ৭৭ বছর আগে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে নোয়াখালীতে হিন্দু নিধনযজ্ঞ কি নিছক একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে ইসলামের শিক্ষা ও প্রেরণা।
ইসলামের শিক্ষা ও প্রেরণা কত ভয়ংকর যখন দেখি, মূর্তি পূজা করার অপরাধে নিজের মা-বাবাকেও সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন ( ইসলাম আসার আগে আরবের মানুষরা মূর্তি পূজা করত)। সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসালাম রাসূল মোহাম্মদ নিজের বাবা মাকে পর্যন্ত পাপী মনে করতেন এবং তাদের জাহান্নামে যাওয়াটা সত্য মেনে নিয়েছিলেন।
[“জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমার পিতা কোথায় আছেন (জান্নাতে না জাহান্নামে)? রাসূলুল্লাহ উত্তর দিলেন জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন চলে যেতে লাগল, তিনি ডাকলেন এবং বললেন, আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে। (মুসলিম ২০৩ আবু দাউদ ৪০৯৫ মুসনাদে আহমাদ ১১৭৪৭)] [রাসূলুল্লাহ বলেছেন, আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আর তাঁর কাছে মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম তখন তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম) ]মূর্তিপূজক হওয়ার কারণে নিজের জন্মদাত্রী ও জন্মদাতা মা বাবার প্রতি যদি ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল মোহাম্মদের এত ঘৃণা থাকে, তাহলে সাধারণ মূর্তি বা মূর্তি পূজার প্রতি তাঁর ঘৃণার ব্যাপ্তি কী রকম?
[“হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোনও কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।] ____(সূরা আল হাজ্জ্ব আয়াত: ৭৩) [তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে (দোযখে) প্রবেশ করবে।] ___(সূরা আল আম্বিয়া-৯৮) [এই মূর্তিরা যদি উপাস্য হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না। প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে।] ___(সূরা আল আম্বিয়া-৯৯) [তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর এবাদত কর যে, তোমাদের অপকার বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? অথচ আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন।] ____(সূরা আল মায়িদাহ আয়াত: ৭৬)মূর্তির প্রতি যখন এত ঘৃণা, তখন মূর্তিপূজকদের প্রতি মুসলমানদের কর্তব্য কী?
[তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন ( অর্থাৎ মূর্তি পূজা করা) তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে ৯-২৯] [আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে| বস্তুত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি ২-১৯১] [আর যদি মূর্তিপূজকরা মূর্তি পূজা না করে তাহলে আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ্ অত্যন্ত দয়ালু । ২-১৯২]কিন্তু মূর্তিপূজকরা যদি দয়ালু আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন না করে মূর্তি পূজা করেই চলে তাহলে?
[আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়| অত:পর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোনও জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা।] ২-১৯৩ [তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়| পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোনও একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর| আর হয়তো–বা কোনও একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত: আল্লাহ্ই জানেন, তোমরা জান না।] ২-২১৬ [অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোনও সাহায্যকারী নেই .] ৩-৫৬ [খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোনও সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট । ৩-১৫১] [যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি । ৫-৩৩] [আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব| কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়| ৮-১২আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলছে, তাদেরকেই আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে।
-সূরা আর রুম আয়াত: ১৬] [সুতরাং যদি কখনো তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তাই দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয় । ৮-৫৭] [আর কাফেররা যেন একা যা মনে না করে যে, তারা বেঁচে গেছে; কখনও এরা আমাকে পরিশ্রান্ত করতে পারবে ন। ৮-৫৯] [অত:পর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও । নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৯-৫] [যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ্ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। ৯-১৪]
কিন্তু যদি মনুষ্যত্বের কারণে, মানবতার কারনে, হিংস্রতা না করার কারণে, সভ্যতার কারণে কোনও মুসলমান মূর্তি পূজক কাফের হত্যা করতে না চায়? তাই লোভ দেখানো হয়েছে মুসলমানদের –
[কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুত: যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অত:পর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপূণ্য দান করব। ৪-৭৪] [গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোনও সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে,-সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ্ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ্ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ্ মুজাহেদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন। ৪-৯৫]শুধু মূর্তি পূজা নয়, যারা ইসলামকে মানবে না, আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না, অথবা সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল মোহাম্মদকে আল্লাহর দূত হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না, তাদের জন্যও আছে ভয়ঙ্কর ঘোষণা। ইহুদীরা মূর্তি পূজক নয়, কিন্তু তারা আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে না অথবা রাসুল হযরত মোহাম্মদকে পয়গম্বর মানে না । তাই :
[ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা| এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে|।আল্লাহ্ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে ।] ৯-৩০ [ “আরো স্মরণ করো, যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত সবসময় বনি ইসরাইলের ওপর এমন লোককে প্রভাবশালী করবেন যারা তাদের নিকৃষ্টতম শাস্তি দান ও নির্যাতন করতে থাকবে।] (সূরা আরাফ : ১৬৭]। [মুসলিমদের সঙ্গে ইহুদিদের যুদ্ধ হবে। মুসলিমরা ইহুদিদের হত্যা করতে থাকবে। তখন তারা (ইহুদিরা) পাথর ও গাছের পেছনে লুকিয়ে আশ্রয় নেবে। তখন পাথর ও গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা, এই তো ইহুদি আমার পেছনে লুকিয়ে আছে। এসো, তাকে হত্যা করো। (সহীহ মুসলিম)।ছত্রে ছত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে এই ঘৃণা এবং হিংসা যেখানে ছড়ানো থাকে, সেখানে ভালোবাসায় জয় করা যায় না। তাই নোয়াখালীর দাঙ্গা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছিল যখন বিহারের ভাগলপুরে হিন্দুরা ব্যাপক হারে মুসলমান হত্যা করতে থাকে। লক্ষ্মী পূজার পনের দিন পরেই দেওয়ালি বা কালীপুজো। ভাগলপুরে মুসলমানরা আলোর রোসনাই জ্বালিয়ে ছিল নোয়াখালীতে মুসলমানের জয় উদযাপন করতে। মুসলমানদের এই বিজাতীয় ঘৃণার ফল হয় ভয়ংকর। ভাগলপুরের হিন্দুরা প্রতিশোধে মেতে ওঠে। নোয়াখালীর দাঙ্গা একদম স্তিমিত হয়ে যায়।
ঠিক একই ভাবে ৭ই অক্টোবর প্রায় ১৪০০ ইহুদিকে হত্যা করার জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিল পৃথিবীর সব মুসলমান। এখন ইসরায়েলের ভয়ংকর আক্রমণের পর পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে তাদের বাঁচিয়ে দেবার জন্য। কাফের ইহুদী মারার জোস ছেড়ে এখন প্যালেস্টাইনের মুসলমানরা এবং পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানরাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে যেন ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকতে পারে। হামাস তাদের ইসলামী বিপ্লব ছেড়ে এখন আন্তর্জাতিক মানবতার কাছে আবেদন করছে ইজরাইলিদের আটকানোর জন্য। ঠিক যেভাবে ১৯৪৬ সালে মুসলমানরা কলকাতা দাঙ্গা শুরু করবার পর হিন্দু প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের পরিপ্রেক্ষিতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর কাছে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আবেদন করেছিলেন, যেন কলকাতায় মুসলমানদের রক্ষা করা হয়।
এটাই ইসলামের বাস্তবতা, ১৪০০ নিরীহ ইসরাইলিকে হত্যা বা অথবা মুম্বই ছত্রপতি স্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের হত্যা কিংবা তাজ হোটেলে নিরীহ মানুষদের হত্যা অথবা কাশ্মীরে নিরীহ পন্ডিতদের হত্যা– ইসলাম বিশ্বাস না করা মানুষের বেঁচে থাকার বাস্তবতা।
আজ সকালে বাজারে লক্ষ্মী পূজার কেনাকটা করতে কাতারে কাতারে বাঙালি হিন্দুর ভিড় দেখে শুধু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছিল, জানেন এই কোজাগরি পূর্ণিমার দিনেই হিন্দু নিধন শুরু হয়েছিল নোয়াখালীতে। আগামী দিনে আপনারও পালা। কারণ ইসলাম মূর্তিপূজকদের হত্যা করার বিধান দেয় এবং কোনও মুসলমান (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে কিন্তু খুবই নগণ্য মাইক্রোস্কোপিক) পবিত্র কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা কে অস্বীকার করতে পারে না।
( লেখক শান্তনু সিংহ একজন আইনজীবী এবং হিন্দু সংহতির সভাপতি। তাঁর এই বক্তব্য একেবারেই তাঁর নিজস্ব, এর সঙ্গে আমাদের ভারতের কোনও সম্পর্ক নেই।)