সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৫ মে: দূরারোগ্য থ্যালাসেমিয়াকে হার মানিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯১শতাংশ নম্বর পেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কোয়েল কাইতি। বাঁকুড়া শহরের কমরার মাঠ এলাকার বাসিন্দা কোয়েলের এই সাফল্যে তার বাবা মা শুধু নয়, পাড়া প্রতিবেশী থেকে শুরু করে কোয়েলের জীবন যুদ্ধের সহযোদ্ধা, ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স সোসাইটির সকলে খুশি। শুধু খুশি বললে হয়ত ভুল বলা হবে, বলা যায় থ্যলাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে কোয়েল একটা অনুপ্রেরণা।
কোয়েলের বাবা মা জানান, খুব ছোটবেলায় থ্যলাসেমিয়া ধরা পড়ার পর থেকেই চিকিৎসা শুরু হয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত দেওয়া চলতে থাকে। সামান্য গ্যাস ওভেন ইত্যাদির রিপেয়ারিং- এর কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি মেয়ের চিকিৎসা চালানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় থেকেই তাদের পাশে দাঁড়ায় ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স সোসাইটি। কিন্তু শারীরিক সমস্যা আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কোয়েল সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে থাকে। পড়াশোনাতেও সে ছিল সমান আগ্রহী।
কোয়েল জানায়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দু’দিন আগেই তাকে রক্ত নিতে হয়েছে। অনেক সময় অসুবিধা দেখা দিলেও আমি সব মানিয়ে নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর-৪৫৩। বাংলা বাদ দিয়ে প্রতিটি বিষয়ে নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে সে। ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষিকা হতে ইচ্ছুক কোয়েল এখন থেকেই উচ্চ শিক্ষায় মনোনিবেশ করেছে। ইংরেজি অনার্স নিয়ে সে পড়াশোনা করতে চায়। তার এই সাফল্যের পিছনে কী রহস্য রয়েছে প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, বাবা মায়ের আকাঙ্ক্ষাই তার প্রেরণা। সে চায় সমাজ থেকে থ্যলাসেমিয়া দূর হোক।থ্যলাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়তে সে আন্দোলনে সামিল হতে চায়। সে বলে থ্যলাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়তে প্রতিটি মানুষের কাছে আবেদন জানাবো। বিয়ের আগে থ্যলাসেমিয়ার বাহক কি না তা পরীক্ষা একান্ত প্রয়োজন। বাবা- মা এর মধ্যে দু’জনই যদি থ্যলাসেমিয়ার বাহক হন তবে তাদের সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই বার্তা দিতে সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও হাজির হয়।
বাঁকুড়া ব্লাড ডোনার্স সোসাইটির সম্পাদক বিপ্রদাস মিদ্যা কোয়েলের সাফল্যে খুশি। তিনি বলেন, কোয়েল একটা অনুপ্রেরণা।ওর এই সাফল্য থ্যলাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের মনে সাহস যোগাবে।