আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ সেপ্টেম্বর:
সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে শিক্ষক দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে৷ যেখানে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিনের অনুষ্ঠান শিক্ষক দিবসের হলেও দর্শকাসনে বসা শিক্ষকদের সামনে কার্যত রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী৷ মুখ্যমন্ত্রীর শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে করা মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিভিন্ন ভাবে কটাক্ষ করে৷
মুখ্যমন্ত্রীর নৈতিক চরিত্র গঠনের পরামর্শ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর অধিকারীর বক্তব্য, “উনি আগে ওনার যারা পার্শ্বদ আছে সেই মন্ত্রীদের চরিত্র তৈরি করুন। সুলতানদের মতো যাদের বান্ধবী৷” সেই সাথে আগের শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা বলেন, “আগের শিক্ষামন্ত্রী ওনার মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় লোক, দলের মহাসচিব ছিলেন। ভোটের সময় বলেন, ২৯৪ এ আমিই প্রার্থী, বেকায়দায় পড়লে বলে ও করেছে আমি না”
মেদিনীপুর শহরে প্রবেশ করে বিদ্যাসাগর হলের সামনে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শুভেন্দু অধিকারী৷ পরে শিক্ষকদের সামনে মঞ্চে বক্তব্যে তিনি বলেন, “সিলেবাসে আকাশকে লেখা আছে আসমান, জলকে লেখা আছে পানি, মা’কে লেখা আছে আম্মা, বাবাকে লেখা আছে আব্বা, এই জিনিস থাকবে না বেশিদিন। রাষ্ট্রবাদী চেতনা জাগ্রত হবেই। গুজরাটে ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ গীতা পড়ানো হয় বিদ্যালয়ে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে অন্তর্নিহিত জ্ঞানের পূর্ণতা প্রাপ্তি হতে পারে না। গীতাকেও সঙ্গে রাখতে হবে। পশ্চিমবাংলায় অষ্টম শ্রেণির জন্য অনুরোধ করবো, পাঠ্য বইতে একটা পাতায় দুর্নীতিগ্রস্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। শিক্ষকরা এই পাতাটা বাদ দিয়ে দেবেন। দয়া করে পড়াবেন না। শিক্ষকদের অনুরোধ করব আপনারা মেরুদন্ড সোজা রেখে চলুন। নিজের পছন্দের রাজনৈতিক মতামত দেওয়ার অধিকার ডক্টর ভিমরাও আম্বেদকর সংবিধানে দিয়ে গেছেন। যদি জোর করে বদলি করতে যায়, মনে রাখবেন ডায়মন্ড হারবারের কৃষ্ণা বৈদ্য প্রমাণ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালতে মামলা করে যে সবাই মাথা বিক্রি করে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর নৈতিক চরিত্র গঠনের পরামর্শ বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেন, “কার মতো চরিত্র হবে পার্থর মত? সুলতানদের মত বান্ধবী। উনি আগে ওনার যারা পার্শ্বদ আছে সেই মন্ত্রীদের চরিত্র তৈরি করুন। ওনার এক মন্ত্রী কিছুদিন আগে মন্ত্রিসভা ছেড়ে দিয়েছেন তবুও বান্ধবীকে ছাড়তে পারেননি। ”
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষকের ডিএ প্রসঙ্গ উস্কে বলেন, “মেধা যুক্তরা রাস্তায় বসে রয়েছে, বাকি শিক্ষকরা কেউ ডিএ পায়নি। খড়্গপুরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় রয়েছে, তার শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মীরা কি হারে ডিএ পাচ্ছে দেখুন। শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের বলবো বদলির ভয় আর করবেন না। বিচার ব্যবস্থা আপনাদের রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। এবার আপনারা রাস্তায় নামুন।”
হলদিয়াতে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পোস্টার প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, “যন্ত্রণার কারণে ভাইপো করিয়েছে এটা। পেটে ব্যথা হলে বাবাগো মাগো করে। ওই জন্য অমিত শাহও আমাকে টার্গেট করেছে। কোনো অসুবিধা নেই, মেদিনীপুরের ছেলে। তাড়িয়ে ছাড়বো।”
বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রীর করা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন,
“আগের শিক্ষামন্ত্রী ওনার মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় লোক ছিলেন। ওনার দলের মহাসচিব ছিলেন। ভোটের সময় বলে ২৯৪ এ আমিই প্রার্থী, বেকায়দায় পড়লে বলে ও করেছে আমি না।”
বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটির হলেও মঞ্চে আলো করে বসেছিলেন বিজেপির নেতা নেত্রীরা। সমগ্ৰ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কমিটির সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা সমিত দাস, জেলা নেতা শংকর গুছাইত, অরূপ দাস সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা।