আমাদের ভারত, ১৫ অক্টোবর: “বাংলাদেশ একটি
‘উন্মাদ রাষ্ট্র’। এটা আমাকে ২৮ বছর আগে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। এখন তারা তথাকথিত ধর্মকে আঘাত করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে!“
শুক্রবার সকালে এই ভাষাতেই টুইট করলেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। দু’দিন ধরে বাংলাদেশে দুর্গাপ্রতিমা ভেঙ্গে দেওয়া ও জোর করে অষ্টমীতে বিসর্জন নিয়ে অশান্তি চলছে। তার প্রেক্ষিতে তিনি টুইটে লেখেন, “হনুমানের কোলে একটি কুরআন। এটা হতে পারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। কিন্তু সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে এটিই কারণ হয়ে দাঁড়ায়।“
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশে এবার ৩২ হাজার ১১৮টি পুজো হচ্ছে। আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২০০০ বেশি। শুনে খুশি হয়েছিলাম। অবশ্য ভেবেওছিলাম, দেশে হিন্দু কমছে পুজো বাড়ছে — কারণটি কী! নির্বিঘ্নে কি পুজো হবে এ বছর? এও ভাবছিলাম প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ আছে, হতেও পারে শান্তিপূর্ণ পুজো। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই বুঝলাম বাংলাদেশে এমন আশা করা যায় না। যায় না, কারণ ধর্মান্ধে ছেয়ে গেছে দেশ। আর কে না জানে যে ধর্মান্ধদের মাথায় কুবুদ্ধি গিজগিজ করে!
কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড়ের দুর্গাপূজা মণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলের ওপর হিন্দু-বিরোধী মুসলমানেরা কোরান রেখে এসেছে। হিন্দুরা কোরান অবমাননা করেছে — এই স্লোগান দিয়ে অত:পর মণ্ডপ ভাঙ্গা হল। এরপরের দৃশ্য আমরা জানি, হিন্দুদের বাড়িঘর পোড়ানো হবে, হিন্দুরা জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হবে, তারপর হিন্দুদের জমিজমা ভিটেমাটি দখল করবে মুসলমানরা।
পুজো এলেই ধর্মীয় দল আর সরকারি দল মিলে হিন্দুদের জায়গা জমি দখল করার জন্য ফাঁদ পাতে। এ নতুন কিছু নয়। সরকারের চুপ করে থাকাও নতুন কিছু নয়। আমার প্রতিবাদও নতুন কিছু নয়।
প্রসঙ্গত, ‘দি ডেইলি ষ্টার’ জানিয়েছে, তসলিমা নাসরিন এবং অন্য দু’জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এই অভিযোগ এনেছে। অন্য দুই আসামি হলেন অনলাইন পোর্টাল ‘উইমেন চ্যাপ্টার’ -এর সম্পাদক সুপ্রীতি ধর লিপা এবং এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সুচিস্মিতা সীমন্তী। তবে, বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না পাওয়ায় “উইমেন চ্যাপ্টারের” পরামর্শদাতা লীনা হককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।