বাংলাদেশের ‘ধর্মান্ধ পরিবেশ’ নিয়ে তসলিমা নাসরিনের ব্যাখ্যায় ফের আলোড়ণ

আমাদের ভারত, ২ জুলাই: বাংলাদেশের ‘ধর্মান্ধ’ ‘পরিবেশ’-এর ব্যাখ্যা করে ফের আলোড়ণ তৈরি করেছেন চিকিৎসক-লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর পোস্টের ১১ ঘন্টা বাদে শনিবার বেলা পৌনে ১১টায় লাইক, মন্তব্য ও শেয়ারের সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৫০০, ২৯ ও ১১২।

তসলিমা লিখেছেন, ”একটা জরিপে দেখলাম বাংলাদেশের জঙ্গিদের মধ্যে ৭৩% সাধারণ ইস্কুলে পড়া ছেলে, আর ২৩% মাদ্রাসায় পড়া ছেলে। এর মানে কিন্তু এই নয় যে মাদ্রাসায় পড়লে ছেলেরা জঙ্গি হবে না। হবে। তবে সেক্যুলার ইস্কুলে অংক, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভুগোল পড়লে জঙ্গি হওয়ার আশঙ্কা নেই, এরকম ভাবাটা ভুল। আজ জানলাম অংক, বিজ্ঞান পড়া ছেলেদের কোরান পড়া ছেলেদের চেয়েও জঙ্গি হওয়ার প্রবণতা বেশি। দোষ কিন্তু অংক বিজ্ঞানের নয়, দোষ পরিবেশের। পরিবেশটাই এখন ধর্মান্ধ। তাছাড়া জঙ্গিরা মাদ্রাসার গবেট ছাত্রদের চেয়ে অংক, বিজ্ঞান পড়া মেধাবী ছাত্রদের ইসলামের ”দাওয়াত” দিতে বেশি আগ্রহী। একবার দাওয়াতের চক্করে পড়ে গেলে সর্বনাশ। আজ না হোক কাল জঙ্গি খাতায় নাম লেখাতেই হবে।

দাওয়াত ব্যাপারটা খুব ভয়ঙ্কর। এটির আরেক নাম ‘মগজধোলাইয়ের ষড়যন্ত্র’। এটি এড়িয়ে যেতে পারলে বেঁচে যাওয়া সম্ভব।“

প্রতিক্রিয়ায় প্রবীর দত্ত লিখেছেন, ”বাস্তবতা আরো করুণ। আমাদের দেশে ৯০% লোকই মানসিকতায় মৌলবাদী। অথচ এরা আধুনিক শিক্ষার সার্টিফিকেটধারী, এমনকি বেশভূষায়ও আধুনিক। আসলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শিক্ষার আদর্শগত জায়গাটাই ধ্বংসের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।“

ভাস্কর নাথ লিখেছেন, ”মৌলবাদীদের দোষ দেখিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ রুখা যাবে না, প্রমাণ স্বরূপ তসলিমার লেখনিতেই তা প্রমাণিত হয়, আগের বাংলাদেশ একেবারেই আজকের বাংলাদেশ নয়। ‘উৎসব যার যার দেশ সবার’ এখন প্রায় বিলুপ্তের পথে। যেখানে ধর্ম সংস্করণ নেই আছে শুধু জনসংখ্যা সংরক্ষণ এই বলে ‘সন্তান হবে অগনিত ‘ রিজেকের মালিক আল্লা, তাই দেখা দিয়েছে সকল সামাজিক বিড়ম্বনা। দেশের সরকারের তরফ থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত সচেতনতার শিবির বন্যার মত না ছড়াচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত দেশের অন্ধকার থেকে ত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে কোনও দেশের জনগণ যেরকম, জনপ্রতিনিধি সেরকমই হয়।“

সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ”জরিপ করে হিসেব নিকেশ করে কি লাভ! প্রতিকার করবে কে? বিজ্ঞান পড়েও যদি ধর্মান্ধ অজ্ঞান হয় দেশের একশ্রেণির নাগরিক, সচেতন প্রতিবাদীদের গলা কাটা গেলেও কারোর কিছু যায় আসে না।“

শেখ মেহেদি হাসান লিখেছেন, ”খুবই মৌলিক কারণ ধরেছেন। তবে জঙ্গি পরিবেশ তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখছে ৫ লক্ষ মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া হুজুররাই৷ সম্প্রতি উগ্র সালাফি জোশ অনেক বেড়েছে। তারা এখন ‘আসল ইসলাম’ শেখাচ্ছে। সুফিবাদ ঘেঁষা উদারপন্থী ইসলাম কে ভন্ড তকমা দিয়ে আস্তে আস্তে ধ্বংস করে দিচ্ছে! এরা প্রতি শুক্রবারে বয়ানে কৌশলে মানুষের মধ্যে জঙ্গি ভাবনা, নারী বিদ্বেষ ও হিংসা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং এই শতকরা হার দিয়ে মূল কারণ বোঝা যাবে না!“

কাওসার হোসেন লিখেছেন, ”বাংলাদেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় তালেবানি হাওয়া বইছে।“ লিটন সানভি লিখেছেন, ”আমার এক ছোট বেলার বন্ধু বিজ্ঞানের ছাত্র এবং এখন একজন শিক্ষক। সে ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে নারী-পুরুষের পাপকর্মকে দায়ী করেছে! আসলে বিজ্ঞান পড়লেও মানুষ ধর্মান্ধ হয়, মৌলবাদী হয়!“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *