Swadeshi Jagran Mancha, দেশজুড়ে বিদেশি পন্য বর্জনের ডাক দিল স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ

আমাদের ভারত, হুগলি, ২৭ জুলাই: আগামী ১০ অগাস্ট দেশজুড়ে বিদেশি পন্য বর্জনের ডাক দিল স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই দু’দিনের কর্মশালা হয়ে গেল হুগলি জেলার পান্ডুয়ার পাঁচগড়ার হরিগুরু গোপাল চাঁদ ধাম-এ। ‘স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ’-এর উদ্যোগে দু’দিনের (২৬ ও ২৭ জুলাই) কর্মশালা গতকাল শুরু হয়েছিল দেবকুমার বিশ্বাসের উদ্বোধনী সঙ্গীতে মাধ্যমে। তারপর উপস্থিত অতিথিদের একে একে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অতিথিরা সবাই পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংরি, দীন দয়াল উপাধ্যায়, বাবু গেণু ও ভারত মাতার প্রতিকৃতিতে।

১৯৯১ সালের ২২ নভেম্বর স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংরি। উদ্দেশ্য ছিল – স্বদেশী অর্থনীতিকে দেশের অর্থনীতি হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের দেশের জন্য যা কিছু প্রয়োজনীয় তা যেন দেশের মধ্যেই উৎপাদন করা যায়- পরনির্ভরশীলতা কাটানো যায়, তাতে আমাদের দেশ শক্তিশালী হবে – এটা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।

পরবর্তীকালে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘স্বাবলম্বী ভারত অভিযান’। উদ্দেশ্য হল – দেশের যা কিছু প্রয়োজনীয় তা দেশেই উৎপাদন করা এবং দেশের যুবক/যুবতীদের বেকারত্ব দূর করা। এই জন্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের যে ছ’টি সংগঠন অর্থনীতি নিয়ে কাজ করে – স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ, ভারতীয় কিষাণ সংঘ, গ্রাহক পঞ্চায়েত, সহকার ভারতী, ভারতীয় মজদুর সংঘ ও লঘু উদ্যোগ ভারতী- তাদের নিয়ে তৈরি করা হয় ‘স্বাবলম্বী ভারত অভিযান’। উক্ত সংগঠনগুলি ছাড়াও RSS-এর আরও অনেক গণ সংগঠনকে এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এই স্বাবলম্বী ভারত অভিযানের কার্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের হাতে।

দু’দিনের এই কর্মশালায় শুরুতে বক্তব্য রাখেন স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের অখিল ভারতীয় সহ-সংযোজক ড: ধনপতরাম আগরওয়াল। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা আমাদের দেশে আসার আগে ভারত ছিল বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র। রাজনৈতিক ভাবে আমরা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করেছি বটে, কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে আমাদের স্বাবলম্বিতা আসেনি। এই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা আসবে স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার করলে। RSS -এর প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ কেশব বলিরাম হেডহেয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, ভারতের প্রতিটি মানুষ সুখী জীবন যাপন করবে। শুধু ভারতের নয়, সমগ্র পৃথিবীর মানুষ যাতে সুখে থাকতে পারে- তাতেই ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ অর্থাৎ বিশ্বের সবাই আমার আত্মীয়, ভারতীয় মনীষীদের বলা এই ভাবনা সার্থক হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড: কল্যাণ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ভারত সরকার পদ্ম বীজের খই বা মাখানা চাষের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিহারে মাখানা বোর্ড গঠন করেছে। আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়, যেখানে জল জমে সেখানে পদ্মের চাষ করলে চাষিরা অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। মাখানার পাশাপাশি দোফলা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি চাষ করে অনেক টাকা লাভ করা যেতে পারে। বেকার যুবক- যুবতীরা ফল চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

ভারত সরকারের ‘খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিস কমিশন’ দপ্তরের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ভারত সরকার গ্রামীণ ও ছোটো ব্যবসার জন্য প্রচুর টাকা লোন দিচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৯৫% পর্যন্ত ঋণে সাবসিডি দিচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে আমরা তা মানুষকে জানাচ্ছি। ব্যবসা করুন, সরকার পাশে আছে আপনাদের।

Director of NAFUB গোপাল আচার্য বলেন, কো-অপারেটিভ তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করতে হবে। বিশেষ করে রাস্তা তৈরির কাছে এগিয়ে আসতে পারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার যুবক- যুবতীরা। প্রধানমন্ত্রী রোজগার যোজনা, মুদ্রা লোন প্রভৃতির মাধ্যমে সরকার ঋণ দিচ্ছে। আপনার সেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করুন। ব্যবসা করে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হোন, অন্যদেরও কাজ দিন।

স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের অখিল ভারতীয় প্রচার প্রমুখ ধর্মেন্দ্র দুবে বলেন, বিদেশি পণ্য আমাদের বয়কট করে দেশীয় পণ্যকে আপন করে নিতে হবে। যে কোনো দ্রব্য কেনার সময় কোন দেশের কোম্পানি তা জেনে কিনলে দেশের সার্বিক বিকাশ হবে। বাংলাদেশের প্রাণ কোম্পানি আমাদের দেশে ব্যবসা করছে। এখান থেকে ব্যবসা করে বাংলাদেশ সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে। সেই ট্যাক্সের টাকাতে ওদেশের বর্তমান শাসকরা আমাদের হিন্দু ভাই-বোনদের উপর অত্যাচার করতে উৎসাহ দিচ্ছে পরোক্ষভাবে। চীন আমাদের দেশে ব্যবসা করছে, আবার আমাদেরই ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তাই সজাগ থাকতে হবে। স্বদেশী আপন করে বিদেশি বর্জনের ডাক দিয়েছে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ আগামী ১০ই আগস্ট’২৫ তারিখ। ঐ দিন ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আমরা চাই, বিদেশি কোম্পানিও আমাদের দেশ ত্যাগ করুক। আমাদের শ্লোগান হোক- ‘দুধ দই থালাতে, পেপসি কোলা নালাতে, চাইনিজ বস্তু ছেড়ে দাও, বলো বন্দেমাতরম’, ‘দেশ লোটার বিদেশি আর্ট, ফ্লিপকার্ট- ওয়ালমার্ট’; ‘ইন্ডিয়া ফাস্ট, স্বদেশী মাস্ট’ ইত্যাদি।

স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের পূর্ব ক্ষেত্রের সহ-ক্ষেত্র সংযোজক অম্লান কুসুম ঘোষ বলেন, বিদেশি আক্রমণ সত্ত্বেও আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় ছিল। কিন্তু আমরা যখন তাদের অনুকরণ করতে শুরু করলাম তখন থেকেই আমাদের অর্থনৈতিক পতন শুরু হল। স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ মানুষকে সচেতন করে আবার দেশীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চায়।

স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সংযোজক ডাঃ দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের কার্যকর্তাদের আরও বেশি করে কাজ করতে হবে, যাতে রাজ্য তথা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সচেতনতা মূলক কাজ আমরা করতে পারি। আগামী ১০ আগস্ট সবাই বিদেশি দ্রব্য বর্জনের ডাক দিন। বিদেশি দ্রব্য ত্যাগ করে স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ করুন সবাই।

এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন স্বাবলম্বী ভারত অভিযানের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সমন্বয়ক শঙ্কর দয়াল মেহেতা, দক্ষিণ-উত্তর-মধ্য- তিন বঙ্গের স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের মহিলা প্রমুখ বাণী সরকার, হরিগুরু গোপাল চাঁদ ধাম-এর সম্পাদক সজল গয়ালী, আর্যাপথের ডিরেক্টর ব্রহ্মজিৎ শিল, সফল উদ্যোগপতী দীপঙ্কর পাল। এই কর্মশালার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন গোবিন্দ গোপাল বিশ্বাস (বর্গাধিকারী, হুগলি জেলার স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের সংযোজক)।

দু’দিনের এই কর্মশালার সঞ্চালনায় ছিলেন স্বাবলম্বী ভারত অভিযানের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সহ-সম্পর্ক প্রমুখ মিলন খামারিয়া ও তুহিন চক্রবর্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *