গালুডি জলাধার থেকে রেকর্ড পরিমাণ জল ছাড়ায় ফুঁসছে সুবর্ণরেখা, প্লাবিত গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইল নয়াগ্রাম

অমরজিৎ, ঝাড়গ্রাম, ২১ আগস্ট: এবার রেকর্ড পরিমাণ জল ছাড়ল গালুডি জলাধার। বিগত কয়েক কয়েক বছরে এত পরিমাণ জল ছাড়া হয়নি। সুবর্ণরেখা নদীর জল ইতিমধ্যেই বিপদ সীমা ছুঁয়েছে। সুবর্ণরেখা ও ডুলুং নদীর তিরবর্তী এলাকার গ্রামে জল ঢুকে গিয়েছে। চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। আর জল ছাড়লে বা ভারি বৃষ্টি হলে বন্যা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় এলাকায় সতর্কতা মূলক প্রচার শুরু করা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ও রবিবার ভোর থেকে ঝাখন্ডের গালুডি জলাধার থেকে ছয় লক্ষ ১৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যা কিনা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ। গত বছর সর্বোচ্চ জল ছাড়া হয়েছিল তিন লক্ষ ১০ হাজার কিউসেক। তার আগের বছর ২০২০ তে জল ছাড়া হয়েছিল আড়াই লক্ষের কাছাকাছি। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত বছর গুলিতে কখনোই চার লক্ষ কিউসেকের উপরে জল ছাড়া হয়নি। এদিন ছয় লক্ষ ১৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার ফলে গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীর জল ৪৫ সেন্টিমিটার ছুঁয়েছে। যা কিনা বিপদসীমা। ৪৫.৪ সেন্টিমিটারের উপরে উঠলেই বিপদ সীমা পার হয়ে যাবে। এদিকে এত পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে গোপীবল্লভপুর এক ব্লকের সাতমা অঞ্চলের ডোম পাড়ায় জল ঢুকে গিয়েছে। পুরো পাড়াতে জল থৈ থৈ করেছে। কিছু কিছু ঘরে জল ঢুকছে। জলের উপরে রয়েছে ঘর বাড়িগুলি। ওখানকার রাস্তা জলের তলায় চলে গিয়েছে। মাটির বাড়ি গুলিতে জল ঢুকছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের এলাকায় একটি বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আজও সে কাজ হয়নি। ফলে তাদের প্রতি বছর দুর্ভোগে পড়তে হয়।এদিকে ডোমপাড়াতে জল ঢুকে যাওয়ার ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষজনকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাবুডুমরো স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী মজুত করা হয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও জল ছাড়ার কারণে গোপীবল্লভপুর এক ব্লকের শাশড়া, সাতমা, গোপীবল্লভপুর, আলমপুর, কেন্দুগাড়ি অঞ্চল গুলির বিস্তৃর্ণ গ্রামের ধান ও সবজি খেত জলের তলায় চলে গিয়েছে। চাষে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জল না নামলে ধান এবং সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হবে।

অন্যদিকে সাঁকরাইল ব্লকের ডুলুং এবং সুবর্ণরেখা দুটি নদীর জল বিপদ সীমা ছুঁয়েছে। এই ব্লকের এই দুটি নদীর তীরে অবস্থিত রোহিনী, আঁধারি, রগড়া, লাউদহ প্রভৃতি অঞ্চল গুলির গ্রামের জমি পুরো জলের তলায়। জমিগুলি দেখলে মনে হবে যেন নদী। বিশেষ করে আঁধারি অঞ্চলের বহরাদাড়ি,ভগবানচক,তেতুলিয়া, হরিপুরা সহ বিভিন্ন গ্রামের জমিতে জল ঢুকছে। যে দিকে দৃষ্টি যাচ্ছে সে দিকে শুধুই জল। সাঁকরাইল এবং গোপীবল্লভপুর এক ব্লকের বিডিওরা এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে খবর নিচ্ছেন।

সাঁকরাইল ব্লকের বিডিও রথীন বিশ্বাস বলেন, “আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”

গোপীবল্লভপুর এক ব্লকের বিডিও দেবজ্যোতি পাত্র বলেন, “বিগত বছর গুলিতে এত পরিমাণ জল ছাড়া হয়নি। একটি গ্রামে জল ঢুকছে। একটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।কয়েক জনকে গ্রাম থেকে আনা হয়েছে সেখানে।খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রচার চলছে। ”

অন্যদিকে নয়াগ্রাম ব্লকেও সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এলাকায় জল ঢুকছে জমিগুলিতে। নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্চিতা ঘোষ বলেন, “প্রচার চলছে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।” জেলার বিভিন্ন ব্লকের নদী, খাল গুলির টইটম্বুর অবস্থা। কজওয়ের উপর দিয়ে জল বইছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজর রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *