আমাদের ভারত, ২৬ আগস্ট:
“কেন্দ্রীয় সরকার রিজার্ভ ব্যাংককে ঢাল করতে পারবে না। সারাদেশে কড়া লকডাউনের জন্যই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।” এভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারকে বুধবার তিরস্কার করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক ভূষণ। একই সঙ্গে আদালত বলেছেন, সব কিছু ব্যাঙ্কের উপর ছেড়ে দিতে পারে না সরকার।
লকডাউনের সময় যাতে ঋণের ওপরে সুদ মুকুব করা হয় সে জন্য একটি পিটিশন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলায় কেন্দ্র সরকার শীর্ষ আদালতে জানায়, রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে সুদ মুকুব করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এরই প্রেক্ষিতে আদালত বলে, লকডাউনের জন্যই ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী পয়লা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্র সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট জানাতে বলেছে যে লকডাউনের সময় সুদ মুকুব সম্ভব কিনা।
বিচারপতিদের মতে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে সরকারের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই সরকার জানাক, তারা সুদ মুকুব করবে কিনা। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, “এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় যাতে সকলেই উপকৃত হবেন।” তাতে বিচারপতি অশোক ভূষণ বলেন, আপনারা সারা দেশ লকডাউন করে দিয়েছিলেন বলেই এই অবস্থা হয়েছে। সরকার আমাদের জানাক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী তারা কি করতে পারে। বেঞ্চের অপর বিচারপতি বলেন,” এখন সরকারের শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা ভাবলেই চলবে না।”
সুপ্রিমকোর্টের সুদ মুকুব করার আবেদনে বলা হয়েছে, ২৭ মার্চ রিজার্ভ ব্যাংক যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তার একটি অংশ বাতিল করা হোক। তবে সুদ মুকুব করা সম্ভব হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি সুদ নেওয়া হয় তাহলে অনেকেই খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ে যাবেন। এতে সংবিধানের যে বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া হয়েছে তা লঙ্ঘিত হবে।
এদিকে আরবিআই আগেই ব্যাংককে জানিয়েছে ঋণের উপর সুদ মুকুব করা হলে ব্যাংকের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।
সুদ মুকুবের আবেদনকারীর হয়ে এদিন সুপ্রিমকোর্টে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। তিনি আবেদন করেন ঋণের ওপর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মে স্থগিতাদেশ জারি করা আছে তা আরও বাড়ানো হোক।
মোরাটোরিয়ামের পরেও ব্যাংক কেন গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদ নিচ্ছে তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলে আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে সরকারকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কেন ব্যাংক অতিরিক্ত সুদ নিচ্ছে সেই বিষয়টিও কেন্দ্রকে খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতকে বলা হয়েছে সবকিছু ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে পারে না সরকার।
বুধবার অ্যানুয়াল রিপোর্টে রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে জুনের শেষে ত্রৈমাসিক মূল্যায়নে দেখা গেছে যে বাজারে চাহিদার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মহামারীর। করোনা শুরু হওয়ার আগে বাজারে যে চাহিদা ছিল সেই অবস্থায় ফিরে যেতে এখনোও অনেক সময় লাগবে।
রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে বাজারে ব্যক্তিগত চাহিদা কমেছে। পরিবহন, হোটেল শিল্প, বিনোদন-সংস্কৃতি কার্যকলাপ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ ভারতের জিডিপি ৬০% আসে ভোগ্য পণ্যের বাজার থেকে।
করোনা সংকট থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে ২১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু তার বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করার জন্য। বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য সহায়তা করা হয়েছে কম বলে মত অনেকের।

