আমাদের ভারত, ২৯ জুন: গত ২৫ তারিখে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গায় একজন সংখ্যালঘু মহিলাকে বিবস্ত্র করে এক কিলোমিটার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজ্যের শাসক দল ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, কোচবিহারের ঘটনা থেকে সংবাদ মাধ্যমের চোখ ঘোরানোর জন্য প্ল্যান করে মুখ্যমন্ত্রী ওই দিন থেকে হকার উচ্ছেদের কথা তোলেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন তারা।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে সুকান্ত মজুমদার দাবি
করেন, যেদিন কোচবিহারের মহিলার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে সেদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হকার নিয়ে অনেক কথা বললেন এবং হকার উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়ে গেল। আবার তার এক- দু’দিন পরে সমস্ত বিষয় ঠান্ডা হয়ে গেল। সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, এই হকার উচ্ছেদ অভিযান শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ ছিল। কোচবিহারের ঘটনা থেকে সংবাদ মাধ্যমের চোখ সরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই হকার উচ্ছেদের প্ল্যানিং করেছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল এই নির্যাতিতার ঘটনাকে ঢাকা দেওয়া। কটাক্ষ করে সুকান্ত মজুমদার বলেন, মা মাটি মানুষের সরকারের আমলে একজন মা বিবস্ত্র হয়ে শুয়ে আছে মাটিতে। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটলো। মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার থেকে ফিরে আসার পরেই এই ধরনের ঘটনা ঘটলো। তাঁর দাবি, ভোটের পর ইতিমধ্যেই কোচবিহারে এক মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। এই ধরনের রাজনীতি যারা করছেন তারা দিল্লিতে গিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলছেন, সংবিধানের কথা বলছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি প্রশ্ন করেন, পশ্চিমবঙ্গে কোন সংবিধান চালু আছে? যেখানে কোন ধারায় বলা আছে কেউ যদি বিজেপি করে, তাদের পরিবারের মহিলাদের জামা কাপড় খুলে নগ্ন করে প্যারেড করানো উচিত। একসময় শেখর কাপুরের সিনেমায় ফুলন দেবীর সাথে এই ঘটনা হয়েছিল। আজ এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি পশ্চিমবঙ্গে দেখতে পাচ্ছি। জানি না পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গল হয়ে যাচ্ছে কিনা।
পুলিশ দাবি করছে, এটা পারিবারিক ঘটনা। এই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, তর্কের খাতিরে যদি সেটাই মেনে নিই, যদি পারিবারিক ঘটনাই হয়ে থাকে তাহলে এই ধরনের অপরাধের ঘটনায় কিভাবে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গেল? তাঁর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশ ছাড়া এই ধরনের অপরাধে পুলিশ এত লঘু ধারা দিতে পারে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা কোর্টে যাব, সিবিআই তদন্ত চাইবো। এর শেষ দেখে ছাড়বো।
সুকান্ত মজুমদার জানান, দলের তরফে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখছে। রবিবার তারা রিপোর্ট জমা দেবে। এরপরেই তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু সিনিয়র সাংসদ জোকারের মতো লাফালাফি করেন এবং গোটা দেশের কাছে হাসির পাত্র হন। তারা মণিপুর নিয়ে চিৎকার করেন। কিন্তু রাজ্যে এই বর্বরোচিত অপরাধ হওয়ার পরেও সরকারের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশ নিজের মতো করে এফআইআর করেছে। কিন্তু তাতে এত লঘু ধারা দেওয়া হয়েছে যে, কিছুক্ষণ পরে ধৃতরা জামিন পেয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, মণিপুরের ঘটনা নিয়ে যেখানে দুটি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষ, সেটা নিয়ে বড় বড় করে লাফালাফি করছে তৃণমূল। কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে বিজেপির জেলা নেত্রীর সঙ্গে ঘটা এই ঘটনা যখন গোটা বাংলাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে তখন কোনো ব্যবস্থা নিলো না তৃণমূল সরকার।
সুকান্ত মজুমদার জানান, ওই নির্যাতিতা মহিলা পার্টি অফিস থেকে নিজের বাড়িতে যেতে পারছেন না। কারণ পুরো এলাকার দখল এখন তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ এবং তার গুন্ডা বাহিনীর হাতে রয়েছে। এলাকায় গেলেই এই মহিলার সঙ্গে ও তার পরিবারের সঙ্গে যে কোনো রকমের দুষ্কর্ম ঘটতে পারে। নির্যাতিতার তরফে তার বাবা এফআইআর করেছে। সেখানে ১১ জনের নাম দেওয়া হলেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। প্রথমবার তারা যখন এফআইআর করেছিল তারা ভয়ে কোনো নাম দিতে পারেনি, কারণ তাদের উপরে আক্রমণ নেমে আসার আশঙ্কা ছিল।