সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২০ মার্চ: ভোটারদের হুমকির সুরে বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়ালেন বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডল। ইতিপূর্বে দলনেত্রীকে মা সারদার সঙ্গে তুলনা করার পর এবার ভোটারদের হুমকি দিয়ে বসলেন। এমনকি আইন, মিডিয়া সহ কোনো কিছুকেই তিনি তোয়াক্কা করেন না, তাও প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে গ্রামবাসীদের জানিয়ে দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার ওন্দা ব্লকের নতুনগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রচারে যান সুজাতাদেবী। সেখানে ভোট প্রচারের ফাঁকেই এক মহিলা ভোটারকে উদ্দেশ্য করে গ্রামবাসীদের সামনেই প্রকাশ্যে তিনি বলেন, “শোনো বলি মাসি, তোমরা ভোট দেওয়ার সময় বড়ো ফুলে দিচ্ছ, আর চাওয়ার বেলায় ছোটো ফুলের কাছে চাইতে আসছ, এবার আমি একেবারে ক্লিয়ার কাট বলছি তাতে মিডিয়া থাক, যে আছে থাক, আই ডোন্ট কেয়ার। এখানে যদি তৃণমূল ভোট না পায় তাহলে তৃণমূলের কেউ তোমাদের অভিযোগ শুনতে আসবে না। তোমরা বিজেপির সাথে বুঝে নেবে”। এই হুমকি দিয়ে সুজাতা দেবী আরও সুর চড়ান। তিনি সেখানে উপস্থিত থাকা দলের স্থানীয় নেতা ও বুথ কর্মীদের কড়া নির্দেশ দেন যে, কোন কোন বুথে বিজেপি লিড পাচ্ছে আর কোন কোন বুথে তৃণমূল লিড পাচ্ছে তা লিখে রাখতে হবে। ভোটের পর যে অঞ্চলে তৃণমূল লিড পাবে সেখানে রাতের অন্ধকারে জীবন বাজি রেখেও এই সুজাতাদেবী হাজির হবেন। আর যে, যে বুথে তৃণমূল লিড পাবে না, সেখানে সুজাতা দেবী তো দূরে থাক, কোনো তৃণমূল কর্মীও গ্রামে ঘেঁসবে না। রণং দেহী মেজাজে প্রকাশ্যেই সুজাতাদেবীর এই হুমকি নিয়ে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীদের অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, এভাবে হুমকি দেওয়া ঠিক নয়। এই হুমকির পর সাংবাদিকরা তাঁকে পালটা প্রশ্ন করলে সুজাতাদেবী অবশ্য তাঁর অবস্থানেই অনড় থাকেন।
প্রসঙ্গত, ওন্দা বিধানসভায় প্রচুর সংখ্যালঘু ও শ্রমজীবী ভোটার থাকলেও পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা সব ভোটেই বিজেপি শাসক দল তৃণমূলের থেকে ভালো মার্জিনে লিড পেয়েছে। বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনের অন্যতম ভোট ফ্যাক্টর এটাই। ওন্দা বিধানসভা এলাকার ভোটারদের এই ট্রেন্ড বদলাতে না পারলে, পরাস্ত করা যাবে না বিজেপিকে তা স্পষ্ট। তাই ওন্দার ভোট নিজেদের অনুকূলে আনতে সুজাতাদেবী এমন বেপরোয়া হুমকি দিয়ে বসলেন বলে জেলার ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। সুজাতা মন্ডলের গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এই হুমকির পরিপেক্ষিতে ওন্দা বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখা বলেন, বিড়াল ঠেলায় না পড়লে গাছে ওঠে না, তৃণমূল সরকার ঠেলায় পড়েছে।গ্রামের মানুষ তাদের চোর বলে বুঝে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন যোজনার টাকা চুরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যোজনাগুলির টাকা কমিয়ে দেওয়ায় তৃণমূল লাফাতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকার কী দেয়? অধিকাংশ পরিষেবা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তাই সুজাতাদেবী যা বলছেন সেটা গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। তিনি হারছেন জেনেই এসব কথা বলেছেন।