জন্মের পর থেকেই মাংসপেশির বিরল রোগে আক্রান্ত, মনের জোরকে সঙ্গী করে প্রতিষ্ঠিত খড়্গপুরের যুবক তুহিন দে

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ ডিসেম্বর: হাতে পায়ে তেমন জোর নেই, তবে মনের জোরের কোথাও কমতি নেই। জন্মের পর মাত্র চার দিন থেকেই ধরা পড়ে এই বিরল মাংসপেশির রোগ। তবে থেকেই মনের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই। যে লড়াইটা শুরু হয়েছিল সেই জন্মের পরে। সেই সংগ্রামে মনের সঙ্গে সংঘর্ষ জারি রেখে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত খড়্গপুরের যুবক। তার ক্রিয়েটিভিটি, তার পড়াশোনা এবং তার বুদ্ধিমত্তা এনে দিয়েছে সম্মান। শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বীকৃতিস্বরূপ জুটেছে জাতীয় এবং রাজ্যস্তরের একাধিক সম্মাননা। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছেন পুরস্কার।

দুটো পায়ে জোর নেই, হাতও কাজে দেয় না। তবুও মুখে পেন ধরে লিখে, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক এমনকি কম্পিউটার সায়েন্সে বি.টেক পাস করেছে এই যুবক।

থুতনি দিয়ে অনায়াসে চালান ল্যাপটপ, মোবাইল। সাধারণ পেন মুখে ঢুকিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তার পড়াশোনা, লেখালেখি। ছোট থেকে নিজেকে বিশেষভাবে সক্ষম না ভেবে আর সাধারণ পাঁচজন ছেলে মেয়েদের মত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই শুরু করেছেন। ছোটবেলায় একাধিক জায়গায় চিকিৎসা হলেও আর সাধারণের মতো জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেনি চিকিৎসকরা। তবে নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলেই সমাজে প্রতিষ্ঠার দৌড়ে এগিয়ে চলেছে সে। লক্ষ্য আইআইটি থেকে এমটেক করার। বিটেক করার পর সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে নিজেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা তুহিন দে। বয়স ২৫ বছর। ছোটবেলায় আইআইটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর রাজস্থানের কোটা থেকে জয়েন্ট এন্ট্রান্স- এর প্রস্তুতি এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সে। এরপর আইআইএসটি শিবপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে সম্প্রতি বিটেক পাশ করেছে তুহিন। এ যাবৎ পর্যন্ত তেমন কোনও গৃহ শিক্ষকের প্রয়োজন পড়েনি তার। নিজের ইচ্ছেতেই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। প্রয়োজনে মুখ দিয়ে লেখা চালিয়ে যেতে হয় তাকে। এটাই অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে ছোটবেলা থেকেই। তবে প্রয়োজনে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহারে তাকে ব্যবহার করতে হয় থুতনি। ২০১১ সালে বেস্ট ক্রিয়েটিভিটির জন্য রাজ্য স্তরে সম্মান, ২০১২,’১৩ তে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সম্মাননা, ২০১৯- এ রাজস্থানের কোটা থেকে বিশেষ পুরস্কার এবং সম্প্রতি ২০২৪-এ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তুহিন।

খড়্গপুর শহরের ব্যবসায়ী সমীরণ দে এবং সুজাতাদের একমাত্র ছেলে তুহিন। ছোট থেকেই অর্থ গ্রাইপোসিস মাল্টিপ্লেক্স কনজেনিটা নামক মাংসপেশির এক বিরল রোগে আক্রান্ত। যে ক্ষেত্রে মাংসপেশির ক্ষমতা কম। তবে মনের জোর তার অদম্য। মনের জোরকে সঙ্গী করে আর পাঁচজনের মতো নিজেকে তৈরি করে সমাজে এগিয়ে চলেছে তুহিন। বিশেষ সক্ষম হয়েও সমাজের কাছে সক্ষমতার নজির তার। অন্যান্য সকলকে দিচ্ছেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা। গোটা দেশবাসীর কাছে এক অনুপ্রেরণা খড়্গপুরের তুহিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *