আমাদের ভারত: শুভেন্দু অধিকারি নাকি গড়তে পারেন নতুন দল। হ্যাঁ এই জল্পনাই এখন তুঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে। এই জল্পনায় আশঙ্কার মেঘ যেমন তৃণমূলের অন্দরে, তেমন বিজেপির অন্দরেও এই আলোচনাই সবচেয়ে বেশি বলে সূত্রের খবর।
সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঝাড়গ্রামে কয়েক হাজার শবর পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন শুভেন্দু অনুগামীরা। সেই সময় তাদের বুকে সাঁটা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির বদলে জাতীয় পতাকার ছবি ও শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়ার সময়কার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে শবর পরিবারের হাতে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট তুলে দিয়ে শুভেন্দু অনুগামীরা বলছেন, “জঙ্গলমহলের দাদা শুভেন্দু অধিকারী তোমাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছে। এই দেখো দাদার ছবি সবাই মনে রাখবে এটা শুভেন্দু দা দিয়েছে। শুধু তোমাদের জন্য”। অথচ তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র সুব্রত লাহা তার দলের তরফে এই ধরনের কোনো কর্মসূচি আছে বলে জানতেন না বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে মেদিনীপুরে বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দু অধিকারীর নানা পোস্টার পড়েছে। তাতে তৃণমূল নেতার বদলে সমাজসেবী শুভেন্দু অধিকারীর নামে পোস্টার ছাপা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবেই সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন তিনি। এই পোস্টারে তৃণমূলের নাম তো দূরের কথা প্রতীকও নেই।
বামেদের সরিয়ে রাজ্য রাজনীতির পট পরিবর্তনের অন্যতম কান্ডারি শুভেন্দু অধিকারীর সাথে শাসক দল তৃণমূলের একটা দুরত্ব তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের যে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে তাতে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যে জঙ্গলমহলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দিয়েছিল দল সেখানে এখন ছত্রধরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ নন্দিগ্রাম আন্দোলনের কান্ডারি এই শুভেন্দুই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাসক দল তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পেছনে এই অধিকারী পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা এলেও প্রথমেই মন্ত্রিত্ব পায়নি শুভেন্দু, সাংসদ হয়েছেন বটে।
কিন্তু মেদিনীপুর জঙ্গলমহলের মত বিরাট অংশের সংগঠনের দায়িত্ব নির্দিধায় শুভেন্দুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন দিদি। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেল সেই দায়িত্ব তার কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হয়েছে। এমনকি রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের দায়িত্ব থেকেও তাকে সরানো হয়েছে। পরিবহন মন্ত্রী হলেও এখন ঐ দপ্তরের কাজ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেখছেন।
আর এই দুই প্রেক্ষিত নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে যে শুভেন্দু নতুন দল করতে চলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলে অন্দরে শুভেন্দুকে নিয়ে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুভেন্দু শুধু তৃণমূলের আলোচ্য বিষয় নয়। বিজেপির অন্দরেও শুভেন্দু নতুন দল গড়ার জল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী যদি তৃণমূল ভেঙে বেরিয়ে এসে নতুন দল তৈরী করতে পারেন আর তা যদি সত্যি হয় তবে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে বাংলায়। কারণ তখন শুভেন্দু অনুগামীরা সেই দলে যোগ দেবে। এমনকি এমন অনেকেই আছেন যারা তৃণমূলে বীতশ্রদ্ধ কিন্তু বাম বিজেপিতে যেতে চান না। তারাও এখানে আসতে পারেন। এমনকি আগামী ২১ এর নির্বাচনে বাম কংগ্রেসের সাথে শুভেন্দুর নতুন দল যৌথ নির্বাচন লড়তে পারে। আর তাতে যেমন তৃণমূলে ক্ষতি তেমন বিজেপিরও বড় সুযোগ হাতছাড়া হবার আশঙ্কা আছে।