আমাদের ভারত, ২ জুন: “বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে নিয়োগের দীর্ঘদিনের যে দাবি রাজ্যের বিদ্বজ্জন ও শিক্ষাপ্রেমী নাগরিকরা উত্থাপন করছিলেন তাকে অস্বীকার করা হল।”
বৃহস্পতিবার সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটি’র সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর এ খবর জানিয়ে বলেন, “এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারের দাবিতে সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির ডাকে আগামী ১৩ জুন দুপুর ২টোয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী ৭ জুন জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সভাও হবে।”
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর যে সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে তাতে আমরা বিস্মিত, স্তম্ভিত। এর ফলে পঠন পাঠন ও জ্ঞানচর্চার মুক্ত বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারের প্রয়োজন ও গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। ইউরোপীয় ও ভারতীয় নবজাগরণের চিন্তা প্রসূত এই স্বাধিকারের ধারণাকে গণতান্ত্রিক শিক্ষার স্বার্থে অস্বীকার করার উপায় নেই। এই ধারণার অর্থ হল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন শিক্ষাবিদ, শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সেখানে বাইরের সমস্ত হস্তক্ষেপ অবাঞ্ছিত বলে বিবেচিত হবে।
কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা প্রশাসনিক প্রধান যদি সেই পদে আসীন হন তাহলে প্রতিমুহূর্তে শিক্ষায় রাজনৈতিক বা সরকারি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা থেকে যাবে। তাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হয়ত রক্ষিত হবে, কিন্তু তা হবে বাধামুক্ত সারস্বতচর্চার স্বার্থের বিনিময়ে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ -তে স্বাধিকার হরণের অনুরূপ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আমাদের অভিজ্ঞতা হল, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সংস্থাগুলি নির্বাচনের পরিবর্তে শাসকের মনোনীত সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, অর্থাৎ গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও কোথাও অবশিষ্ট নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে ভিজিটর নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত একই নীতির অনুসারী।
আমরা মনে করি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল বা প্রধানমন্ত্রী (বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে) যদি আচার্য থাকেন তাহলে উপাচার্য থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাকর্মী দলমত নির্বিশেষে সকলেরই সরকারি কোনো নীতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পরিপন্থী মনে হলে মত প্রকাশের দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকবে না। ভিন্নমত প্রকাশ করলে শাসকের বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। এককথায় শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার দাবি করছি।
আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল বা প্রধানমন্ত্রী কেউই নন, উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে অভিজ্ঞ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করা উচিত।”
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী, অসিত চক্রবর্তী, দীপক কুমার বাগচি, স্বপন প্রামাণিক, পবিত্র গুপ্ত— এই পাঁচ প্রাক্তন উপাচার্য, বিভাস চক্রবর্তী, চিত্রা সেন, কৌশিক সেন, রাজা সেন, অনীক দত্ত, স্বাতী চক্রবর্তী, ল্যাডলি মুখোপাধ্যায়, সমীর আইচ— এই আট শিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্ব, চিত্র পরিচালক। আছেন পাঁচ বিজ্ঞানী পলাশ বরণ পাল, ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), অমিতাভ দত্ত (ইন্ডিয়ান ইন্সটিট্যুট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ), সৌমিত্র ব্যানার্জি (ভাটনগর পুরস্কার প্রাপ্ত), অসিত কুমার ঘোষ, ছয় প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল কুমার মুখোপাধ্যায়, সৌমেন্দু সেনগুপ্ত, অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, মৈত্রেয়ী বর্ধন রায়, সীমা চক্রবর্তী, প্রিয়তোষ খান।
এ ছাড়াও স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, শিক্ষাব্রতী চৈতালি দত্ত (প্রাক্তন সভাপতি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ), শান্তা দত্ত (প্রাক্তন ডিন), মীরাতুন নাহার, সুজাত ভদ্র, অনীশ রায়, বিষ্ণুপ্রিয়া দত্ত (জেএনইউ), সীমা বৈদ্য (জেএনইউ), দেবাশিস ঘোষাল (জেএনইউ), আফতাবুজ জামান (বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), সঞ্জয় গুহ রায় (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়), সুস্মিতা নিয়োগী (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), দেবমিতা শিকদার (কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল), গৌতম মাইতি (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), গৌতম নন্দী (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), ভাস্কর গুপ্ত (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), অনুপ ব্যানার্জি (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), কাজি লালিয়া খালেদ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), দুর্জয় মজুমদার (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়), অশোকেন্দু সেনগুপ্ত , প্রদীপ দত্ত, শান্তনু রায় (আইআইটি), পার্থসারথি সেনগুপ্ত প্রমুখ।
আছেন চিকিৎসক ডাঃ গৌতম সাহা, ডাঃ ভবসিন্ধু মণ্ডল, ডাঃ সুচেতন ভট্টাচার্য, ডাঃ রণজিৎ কুমার মণ্ডল প্রমুখ। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক ডঃ কানাইলাল দাস, প্রসেনজিৎ দাস, পঞ্চানন ময়রা, বিশ্বজিৎ পোদ্দার, প্রাণকৃষ্ণ ব্যানার্জি, কাবেরী চ্যাটার্জি, ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য, সুভাষ চন্দ্র ঘোষ, শ্যামল মিশ্র, চণ্ডীচরণ মাইতি প্রমুখ।

