আমাদের ভারত, ১৯ আগস্ট: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের নিয়োগ ঘিরে দীর্ঘ আইনি লড়াই- এর অবসান হলো। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলো, এই নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি। রাজ্যের পক্ষ থেকে দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আর এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সরাসরি দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
আজকের রায় সামনে আসার পরেই রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আবার একবার সরব হন বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, এর জন্য কেবলমাত্র দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “প্রথম দিন থেকেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি, ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি নির্দেশে এসএসসি ইচ্ছাকৃতভাবে ওএমআর শিটের প্রতিচ্ছবি সংরক্ষণ করা এড়িয়ে গেছে। এর পেছনের কারণ ছিল, সহজে টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করা এবং মেধাকে জানালা থেকে ছুঁড়ে ফেলা। তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী পুনর্বিবেচনার আবেদন করা নিয়ে বহু লম্বা লম্বা দাবি করেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলটি কেবল একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।”
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে শিক্ষকদের এখন আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। এই বিপর্যয়ের জন্য একমাত্র দায়ী ব্যক্তি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য কেউ নয়।”
তিনি বলেন, “যারা টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছিলেন তাদের এই চাকরির চক্র পরিচালনাকারী তৃণমূল নেতাদের কাছে গিয়ে তা ফেরতের দাবি জানান।”
অন্যদিকে সুকান্ত মজুমদার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সত্যিকারের যোগ্য শিক্ষকরা – যাদের ক্যারিয়ার এবং জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্নীতির কারণে অপূরণীয় আঘাত পেয়েছেন। এমনকি দুঃখজনকভাবে, উদ্বেগ এবং হতাশায় ডুবে থাকা একজন আদিবাসী শিক্ষক তার জীবনও হারিয়েছেন। এই মৃত্যুর জন্যও, একমাত্র দায়ী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস।”
প্রসঙ্গত, এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছিল, সেটাকেই মূলত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩ এপ্রিল যে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত, তার কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন করা হয়েছিল। শীর্ষ আদালতের রায় সামনে আসতেই নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সুপ্রিম কোর্টের ৪১ পাতায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, যারা অযোগ্য বা দাগি হিসেবে ধরা পড়েছেন তাদের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি এতদিন পাওয়া বেতন ফেরত দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, যেহেতু দুর্নীতির মাধ্যমে তারা নিয়োগ পেয়েছেন তাই এটি প্রতারণার সামিল। সেই কারণে বেতন রাখার অধিকার তাদের নেই। এমন প্রার্থী সংখ্যা আনুমানিক প্রায় সাত হাজার। এই অযোগ্যের মধ্যে রয়েছে, যারা সাদা খাতা জামা দিয়ে চাকরি পেয়েছে প্রমাণিত, প্যানেলের বাইরে যাদের নিয়োগ হয়েছে অর্থাৎ তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও তারা চাকরি পেয়েছেন, এছাড়াও মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল ব্যবহার করে যাদের নিয়োগ হয়েছে।
তবে যারা অযোগ্য প্রমাণ হয়নি, তাদের চাকরি না থাকলেও, তাদের বেতন ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আদালত জানিয়েছে, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া অসংবিধানিক। সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ অনুচ্ছেদ- এর পরিপন্থী নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল হওয়াই স্বাভাবিক। যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাদের বেতন ফেরত দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।