পুরুলিয়ায় লড়াই দেখতে গিয়ে কাড়ার আক্রমণে মৃত্যু দর্শকের

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৬ অক্টোবর: লড়াই দেখতে গিয়ে কাড়ার আক্রমণে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। মৃত ব্যক্তির নাম রথু বাউরি (৫২)। তাঁর বাড়ি পাড়া থানার ন’ডিহা গ্রামে।

আজ সকালে পুরুলিয়ার পাড়া থানার অন্তর্গত হাতিমারা গ্রামে প্রতিযোগিতামূলক কাড়া লড়াই হয়। সেখানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার উৎসাহী মানুষজন কাড়া লড়াই দেখতে ভিড় জমান। কাড়া লড়াই চলার মুহূর্তে একটি কাড়া দর্শকের দিকে ছুটে আসে। তার পরে একটি আখড়ার (লড়াইয়ের মাঠ) পাশে থাকা দর্শকদের দিকে ছুটে যায়। সেই সময়ই কাড়ার আক্রমণে গুরুতর আহত হন রথু বাউরি। ঘটনার পরই আয়োজক কমিটির লোকজন তড়িঘড়ি ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে স্থানীয় কুস্তাউর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার পরই ভেস্তে যায় ওই কাড়া লড়াইয়ের আসর। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, জেলায় নিষিদ্ধ রয়েছে কাড়া লড়াইয়ের আসর বসানো। সেখানে পাড়া থানার ওই এলাকায় পুলিশের অজান্তে কাড়া লড়াইয়ের অনুষ্ঠান হল কীভাবে? কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশ্ন উঠছে। তবে, পুলিশ আইনানুগ দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।

পুলিশ-প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, নিয়ম-বিধি ভেঙেই পুরুলিয়ার আদিমতম এই খেলা দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল সেখানে। এক বছর আগে বরাবাজার এলাকার সিন্দ্রি জিলিং গ্রামে একই ভাবে আনন্দ করতে গিয়ে গর্তে পড়ে মৃত্যু হয় এক দর্শকের। কাড়ার লড়াই মানে হল মোষের লড়াই। পুরুলিয়ার লোক সংষ্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য হল এই মোষের লড়াই, যাকে স্থানীয়রা বলেন কাড়ার লড়াই। মোষের লড়াই দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনা কিছু কম ঘটে না। মোষের শিঙের আঘাতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এর আগে। জখমও হয়েছেন অনেকে। তাই নিয়ম করে এই খেলা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এরপরেও গোপনে পুরুলিয়ার নানা গ্রামে কাড়ার লড়াইয়ের আসর বসে। ভিড় জমান বহু মানুষ। গত বছরও বরাবাজারের সিন্দ্রি জিলিং গ্রামের ময়দানে বিনা অনুমতিতেই মোষের লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়। খেলা দেখতে গিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে গর্তে পড়ে যান একজন। পরে মারাও যান তিনি। খেলা দেখতে দেখতে তিনি মাঠের একদম ধারে চলে আসেন। সেখানে একটি বাড়ির থাম্বা তৈরির জন্য বড় বড় গর্ত করা ছিল। সেই গর্তে তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। একটি মোষও পড়ে যায় গর্তে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুরুলিয়ায় মোরগ ও কাড়ার লড়াই আদিমতম খেলা। এই দুই খেলার আয়োজন করে মানভূমের মানুষ বীরত্বের স্বাদ অনুভব করেন। সাবেক মানভূম জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোষের লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়। স্থানীয়রা বলেন, কাড়া মাঠে শিং উঁচিয়ে পরস্পরের দিকে যখন তেড়ে যায় দুই কাড়া সেই দৃশ্য দেখার একটা আলাদা অনুভূতি থাকে। কাড়া লড়াইয়ের মাঠে হাজির থাকা দর্শকরা বেশিরভাগই দিন মজুর বা প্রান্তিক চাষি। এলাকায় সেই অর্থে বিনোদনের তেমন অবকাশ নেই। মোষের লড়াই দেখে উত্তেজনায় গা গরম করা, বাজি ধরার মধ্যেই তাঁদের আনন্দ লুকিয়ে থাকে। তাই বিপজ্জনক জেনেও খেলা দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও তাই এই খেলা এখনও রমরম করে চলছে পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায়। আর ঘটছে প্রাণ হানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *