আমাদের ভারত, ১৯ এপ্রিল: ১৯১৫-র ১৯ এপ্রিল। সারদা দেবী বিষ্ণুপুরগামী ট্রেনে হাওড়া স্টেশন থেকে জয়রামবাটির উদ্দেশে যাত্রা করলেন। সেই যাত্রার বিশেষ তাৎপর্য ছিল। সেটির স্মরণে শনিবার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ট্রেনটি বেঙ্গল-নাগপুর রেলপথের (তখন দক্ষিন-পূর্ব রেলগথের ওই নাম ছিল) গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বাগনানে এসে থামল। যে কোনও কারণেই হোক ট্রেনটি সেদিন দীর্ঘক্ষণ বাগনান স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওই সময়কার প্রধান পুরুষ, ইংরেজ শাসকদের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘাযতীন, চার সঙ্গী সহ তখন অজ্ঞাতবাসে বাগনানে।
স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে সারদা মা রয়েছেন। খবর পেয়েই ছদ্মবেশ পটু যতীন্দ্রনাথ পুলিশের গুপ্তচর বাহিনীর কড়া নজর এড়াতে ছদ্মবেশে ট্রেনের কামরায় উঠে সারদা মাকে দর্শন ও প্রণাম করলেন। সারদা দেবী যতীন্দ্রনাথের তখনকার অবস্থা জেনেও সমস্ত বিপদ উপেক্ষা করে তাঁকে আশীর্বাদ করেন। যদিও এর আগেই যতীন্দ্রনাথের সারদা-দর্শন হয়েছে।
বালাশোর বুড়িবালামের তীরে শহিদ হওয়ার আগে এই সাক্ষাৎ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী বিষয়। আর এর ঘটনাস্থল হিসেবে বাগনান রেল স্টেশন সমগ্ৰ ভারতবাসীর কাছে পীঠস্থানের মর্যাদা দাবি করে।
বিষয়টা তথ্য-প্রমাণসহ তুলে এনে সাময়িক পত্রে প্রকাশ করেছিলেন কবি, লেখক, আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ শুভেন্দু দত্ত। আর ঘটনাটির ১১০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ বছর ‘বাঙ্গালপুর মহিলা বিকাশ কেন্দ্রে’ শনিবার ‘আলেয়া পত্রিকা’ আয়োজন করল এক আবেগঘন অনুষ্ঠানের। কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও আমলা নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকার কথা এবং সারদাদেবীর আলোকিত ব্যক্তিত্বের।
অনুষ্ঠানে হাওড়া জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সংগ্রামীদের নিয়ে আলোচনা করেন ড: আকরাম হোসেন, অধীরকান্তি মণ্ডল, গোপাল ঘোষ, ড: শেখ নূর মহম্মদ, সুমন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এতে স্বাধীনতা বিষয়ক সাহিত্য পাঠ, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যে অংশ নেন মৌসুমী মুখোপাধ্যায়, লতা দাশ, অন্বেষা মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ দাসী, পাপড়ি পানি, সন্দীপ দেয়াসী প্রমুখ।
স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের বংশধরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি ভিন্ন মাত্রা পায়। অনুষ্ঠানে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বাগনান স্টেশনে এই সাক্ষাৎকারের একটি স্মারক স্থাপনে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আবেদন করা হবে বলে জানানো হয়। অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় মণিরুল ইসলাম এবং সুমন মুখোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায়।