আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ২৩ আগস্ট: দূষণ কমাতে সাইকেলে চড়ে আশ্রমিকদের বাড়ি গেলেন বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। একই সঙ্গে খাঁকি নয়, অনেকটা শান্তিনিকেতন ঘরানার পোশাক পরেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিশ্বভারতীতে পাঁচিল তোলা নিয়ে স্থানীয়দের মতামত জানলেন তিনি। প্রত্যেকের মতামত যথাযোগ্য স্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন পুলিশ সুপার।

বিশ্বভারতীর পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। উপাচার্যের নির্দেশে পাঁচিলের কাজ শুরু হয়ছিল৷ যেদিন সেই কাজ শুরু হয়, তার পরদিন অর্থাৎ ১৭ আগস্ট সকালে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে বিশ্বভারতী জুড়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। ভাঙ্গচুর করা হয় নির্মাণ সামগ্রী সহ বিশ্বভারতীর অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস ও পৌষমেলার গেট। লুটপাট করা হয় সিমেন্ট সহ নির্মাণ সামগ্রী। ঘটনায় নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি, বিদায়ী কাউন্সিলর শেখ ওমরদের। ঘটনাটি শান্তিনিকেতন থানার সামনে ঘটলেও পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ বিশ্বভারতীর৷ অন্যদিকে, একইভাবে শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিকদের বাড়ির সামনে পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শান্তিনিকেতনকে অচলায়তনে পরিণত করা হচ্ছে, অভিযোগ বহু আশ্রমিকের। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ১৯ আগস্ট জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গরহাজির থাকলেও বহু আশ্রমিককে দেখা গিয়েছিল।

রবিবার পাঁচিল প্রসঙ্গে প্রবীণ আশ্রমিকদের মতামত জানতে শান্তিনিকেতন থানা থেকে সাইকেলে চড়ে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যান জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং। ছিলেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (বোলপুর) শিবপ্রসাদ পাত্র, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সহ অন্য পুলিশকর্মীরা। সকলের পরনে ছিল পাঞ্জাবি৷ পুলিশ আধিকারিকরা আশ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি যান ও পাঁচিল দেওয়া নিয়ে তাঁদের মতামত মন দিয়ে শোনেন এবং লিপিবদ্ধ করেন। আশ্রমিক উর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়, সুজিত চট্টোপাধ্যায়, লীলা ভট্টাচার্য, ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর প্রমুখের সঙ্গে কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার। পরে শান্তিদেব ঘোষের বাড়ির সামনে দেওয়া পাঁচিলটি খতিয়ে দেখেন পুলিশ আধিকারিকরা।

আশ্রমিক ও ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “পাঁচিল তোলার নামে জায়গাগুলোকে নষ্ট করা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।” আশ্রমিক নীলা ভট্টাচার্য বলেন, “বিশ্বভারতীর দিকে দিকে পাঁচিল দিয়ে জেলখানায় পরিণত করা হচ্ছে। আমরা এগুলো মানতে পারব না।”
জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং বলেন, “আশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললাম। তাঁদের মতামত নিলাম। মতামত লিপিবদ্ধ করেছি। পাঁচিল নিয়ে যদি কারও অভিযোগ থাকে, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

