রেলবাজেটে বঞ্চনার শিকার দক্ষিণ দিনাজপুর, ক্ষোভ প্রকাশ ব্যবসায়ীদের, ভোট বাক্সেই মিলবে জবাব বলছে তৃণমূল

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৫ ফেব্রুয়ারি: দীর্ঘ দু’দশক বাদে ফের রেল বাজেটে চরম বঞ্চনার শিকার দক্ষিণ দিনাজপুর। ক্ষোভ প্রকাশ ব্যবসায়ীদের, হতাশ জেলার মানুষ। ভোট বাক্সেই জবাব দেবে জনগণ, বলছে তৃণমূল। জমিজট নিয়ে সাফাই সাংসদের। ২০২১ এর রেল বাজেটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট হিলি রেলপথ সম্প্রসারণ ও বুনিয়াদপুর- কালিয়াগঞ্জ রেলপথ সম্প্রসারণ সহ একাধিক প্রকল্পের জন্য মাত্র এক হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই হতাশা ও ক্ষোভের সুর চড়িয়েছে জেলার মানুষ। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের রেলকে ঘিরে এমন বঞ্চনার ঘটনায় হতবাক হয়েছেন জেলার ব্যবসায়ীমহলও। রেল সহ কেন্দ্রীয় যাবতীয় পরিষেবা আরও সহজে মানুষের হাতে তুলে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে জয়লাভের পরেও জেলাবাসীকে দিয়েছিলেন একাধিক প্রতিশ্রুতি। যার কোনওটাই আজও ফলপ্রসূ হয়নি বলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিরোধী দলগুলি। জেলা নিয়ে বঞ্চনার এমন রেলবাজেট নিয়ে চরম ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রায় দুই দশক আগে একলাখি বালুরঘাট রেল প্রকল্পের জন্য মাত্র এক হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল তৎকালীন রেলমন্ত্রক। এর প্রতিবাদে সে সময় সাংসদ তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক হাজার টাকার চেক কেটে ওই প্রজেক্টের টাকা সংসদে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। এবারে বালুরঘাট লোকসভায় ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। কেন্দ্র সরকারেও রয়েছে বিজেপি দল। তা সত্বেও কেন বালুরঘাট হিলি রেলপথ সম্প্রসারণ, বুনিয়াদপুর কালিয়াগঞ্জ রেলপথ সম্প্রসারণে মাত্র এক হাজার টাকা বরাদ্দ করা হল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধী দলগুলি। শুধু তাই নয়, বুনিয়াদপুরে রেলের ওয়াগন তৈরীর কারখানা, বালুরঘাট গাজোল বিদ্যুতিকরণের কাজ, বালুরঘাটে রেলের রেক পয়েন্ট তৈরী, রেলের আধুনিক হাসপাতাল সহ বালুরঘাট স্টেশন চত্ত্বরে মালটি ফেসিলিটি সেন্টার তৈরী সহ যাবতীয় প্রকল্পের কাজ আজ বিশ বাঁও জলে। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। রেলকে ঘিরে এইসব বঞ্চনা যে এবারের বিধানসভা নির্বাচনের মূল ইস্যু হতে চলেছে তা যেন বুঝতে পেরেই আগাম সাফাই গেয়েছেন সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। এদিন একটি ভিডিও প্রকাশ করে সাংসদ জানান, বালুরঘাট হিলি রেলপথ ও বুনিয়াদপুর কালিয়াগঞ্জ রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ জমি জটে আটকে রয়েছে। সেকারণেই রেলমন্ত্রক এবছর কোনও টাকা বরাদ্দ করেনি। বিধানসভা নির্বাচনের পরে তারা ক্ষমতায় এলে সেসব কাটিয়ে সমস্ত প্রকল্পের কাজই দ্রুততার সঙ্গে শেষ করবেন। তখন অর্থের অভাব হবে না।

তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি গৌতম দাস জানান, এবারের রেল বাজেটে বালুরঘাট হিলি ও বুনিয়াদপুর কালিয়াগঞ্জ রেল প্রকল্পের কাজ অনেকটাই এগোবে বলে আমরা খুবই আশাবাদি ছিলাম। কিন্তু রেলবাজেটে মাত্র একহাজার টাকা বরাদ্দ করায় আমরা হতাশ। কেন্দ্রীয় সরকারের এরাজ্য তথা এই জেলার প্রতি কি মনোভাব রয়েছে তা এই বাজেটেই পরিস্কার হয়েছে। যেহুতু বাংলাদেশ হিলিতে রেলের রেক পয়েন্ট রয়েছে, সেকারণে আমরা আশা করেছিলাম যে হিলি পর্যন্ত এই রেলপথ সম্প্রসারিত হলে জেলার অর্থনৈতিক মানচিত্রের অনেকটাই পরিবর্তন হতো। কিন্তু সেসব উদ্যোগ গ্রহণে যে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ তা রেল বাজেটে ফের একবার প্রমাণিত হল। ‌

হিলি এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের সদ্য নিযুক্ত সম্পাদক ধীরাজ অধিকারী জানান, রেলবাজেট তাদের ব্যবসায়ী মহলকে হতাশ করেছে। তারা আশাবাদী ছিলেন রেকপয়েন্ট ও হিলি-বালুরঘাট রেলপথ সম্প্রসারণের ব্যাপারে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার রেলবাজেটে একহাজার টাকা বরাদ্দ করে তাদের ব্যবসায়ীদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *