বারুইপুরে পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার কঙ্কাল, খোঁজ নেই বাড়ির মালিকের, তছনছ বাড়ি ঘর

আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ১৮ সেপ্টেম্বর:
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মীর বাড়ির দোতলার ঘর থেকে উদ্ধার হল কঙ্কাল। শুক্রবার সকালে এই কঙ্কাল উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর থানার অন্তর্গত নর্থ কেবিন রোড এলাকায়। বাড়ির মধ্যে গা ছমছম পরিবেশ। খোঁজ নেই বাড়ির মালিক অনঙ্গ মোহন মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। কে বা কারা এই কঙ্কাল বাড়ির মধ্যে রেখে গেছে, বাড়ির মালিকই বা কোথায় তা জানেন না কেউই। ঘটনার খবর পেয়ে বারুইপুর থানার পুলিশ এসে কঙ্কাল উদ্ধার করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কিসের কঙ্কাল তা জানার জন্য ফরেন্সিক টেস্টেও পাঠানো হবে সেটি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এদিন সকালে এলাকার কচিকাঁচারা ক্রিকেট খেলার সময় ঐ বাড়িতে বল ঢুকে যায়। সেই বল আনতে গিয়েই তারা লক্ষ্য করে বাড়ির দরজা ভাঙ্গা, ভিতরে কেউ নেই। কার্যত সমগ্র বাড়িটি আগাছায় ভর্তি হয়ে গেছে। আর সেই ঘরের মধ্যে উঁকি মেরেই তারা দেখতে পায় ভিতরে কঙ্কালের হাড় পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জিনিষপত্র। ভয়ে সেই বাড়ি থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আশপাশের মানুষজনকে খবর দিলে স্থানীয় কাউন্সিলার তপতি নস্করের প্রতিনিধি এসে পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। সেখানে গিয়ে তারা কঙ্কাল ভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করেন। কঙ্কালের হাড়ের গায়ে লাল, নীল রঙের বিভিন্ন দাগ দেওয়া। পাশ থেকে উদ্ধার হয় একটি কালী মূর্তিও। ঘরের ভিতর লন্ডভন্ড করা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাপড়, জামা, সুটকেশ। বেশ কয়েকটি আলমারি ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে। এমনকি সিসিটভি ক্যামেরা ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

পুলিসের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ব্যাঙ্ককর্মী তন্ত্র সাধনার জন্য কিছু হাড় নিয়ে এসেছিলেন। সুবুদ্ধিপুর নর্থ কেবিন রোডে শ্যামা কুটির নামে বাড়িটি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী অনঙ্গ মোহন মন্ডলের। তার স্ত্রী শিক্ষিকা ও মেয়ে দীপান্বিতা মন্ডল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। ছেলে রাজ্যের অন্যত্র থাকে কর্মসূত্রে। ২০১৮ সালে নোটবন্দির সময় থেকেই পরিবার এলাকা থেকে বেপাত্তা হয়ে যায়। তবে তারা হটাৎ কোথায় চলে গেলেন সে সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। এদিন এলাকার কিছু ছেলে রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বল বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। সেই বল আনতে গিয়ে তারা দেখে ঘরের সব দরজা খোলা, ব্যাপক লুঠপাঠ চালানো হয়েছে ঘরে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আশপাশের প্রতিবেশীদের সাথে তেমন সদ্ভাব ছিল না অনঙ্গ মোহন মন্ডলদের। বাড়িতে কেউ না থাকার ফলে ঝোঁপ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে তিনতলা বাড়িটি। ভিমরুলের চাক বাসা বেঁধেছে ঘরে। ভয়ে বাড়িতে আশপাশের কেউ ঢোকার সাহস পেত না। এদিন পুলিস এসে বাড়ির বাইরের গেটের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। বাইরের গেটে তালা দেওয়া থাকলেও বাড়ির ভিতরে সব দরজা খোলাই ছিল।

পুরমাতা বলেন, “২০১৬ সালে অনঙ্গ মোহন মন্ডল বাড়িতে এসেছিল একপ্রকার সাধুর বেশে। তাঁর গলায় হাতে মাদুলি, কবচে ভরা ছিল। এসে জানায় তাঁকে কেউ কালাজাদু করেছে। যদিও এই কথা বিশ্বাস না করে তাঁকে ভালোভাবে থাকতে বলি। এরপরে নোটবন্দি কান্ডের সময় তাঁদের বাড়ির সামনে ঝিল থেকেই কয়েক বস্তা টাকা উদ্ধার হয়েছিল। সেই থেকেই বেপাত্তা হয়ে যায় তাঁরা।

তদন্তকারী অফিসাররা বলেন, পাঁচিল টপকে যে কেউ এই বাড়িতে ঢুকতে পারতো। একতলা, দোতলার ঘর খোলা ছিল। তিনতলার মেঝে থেকে কিছু ডাক্তারি বই, অন্য কিছু বই উদ্ধার হয়। ঘরে লুঠপাঠ হলেও ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস খোয়া যায়নি। সমগ্র বিষয়টি নিয়েই ধোঁয়াশায় রয়েছেন তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *