শনিবার শাহের সঙ্গে তৃণমূল উৎখাতের ডাক শুভেন্দুর!

আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১৭ ডিসেম্বর: শুভেন্দু অধিকারীর গতিপথ যেভাবে  মোড় নিচ্ছে তাতে মুখ্যমন্ত্রীর মেদিনীপুরের সভার বারো দিন পর অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়েই তিনি মেদিনীপুরের সভা থেকে তৃণমূলকে রাজ্য থেকে উৎখাতের ডাক দিতে চলেছেন। বুধবার বিধানসভার সদস্য পদ এবং দলীয় সদস্য পদ ছাড়ার পর পূর্ব মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া  জেলায়  তার  সহায়তা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপির পতাকা উড়িয়েছে তার অনুগামীরা। এরপর নিশ্চিতভাবেই ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের মাটিতেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত সরকারকে উৎখাত করতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সভা করছেন বলে বিজেপির দলীয় সূত্রে জানাগেছে। অমিত শাহের শনিবারের জনসভায় শুভেন্দুর সঙ্গে অন্তত চার জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে জেলা বিজেপি সূত্রে খবর।

এবিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট করে কিছু জানাতে না চাইলেও তার অনুগামীদের সূত্র থেকে সেরকমই আভাস দেওয়া হয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেদিনীপুরে প্রথম রাজনৈতিক জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে ২৬ নভেম্বর হুগলী রিভার ব্রিজ কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে শুরু করে দুটি মন্ত্রিত্বও ছেড়ে দেন শুভেন্দু। ছেড়ে দিয়েছেন রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা। তারপরই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে শুভেন্দুর মোকাবিলায় কৌশল ঠিক করা হয় এবং ৭ ডিসেম্বর শুভেন্দুর গড় হিসেবে পরিচিত মেদিনীপুরে প্রথম জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার ঠিক ১২ দিন পর সেই মেদিনীপুরেই  অমিত শাহের সঙ্গে সভা করতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। অমিত শাহের ঘোষিত বঙ্গ কর্মসূচিতে প্রথমে ঠিক হয়েছিল তিনি বনগাঁয় সভা করবেন। কিন্তু পরে ঠিক হয় ঝাড়গ্রাম ও দুই মেদিনীপুর জেলার পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনা করবেন মেদিনীপুরের স্পোর্টস কমপ্লেক্স চত্বরে। কিন্তু সেই হিসাব পাল্টে যায় মঙ্গলবার।

রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারীকে ফোন করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ঐদিন অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর ছিল শুভেন্দু অধিকারীর পঞ্চাশতম জন্ম দিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি আলোচনা হয় তাঁর বিজেপি দলে যোগদানের বিষয়টিও। দুজনের মধ্যে কথা হয় চার মিনিট কুড়ি সেকেন্ড এবং তার মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যায় যোগদানের বিষয়টি। এরপরেই দিল্লিতে পৌঁছে যায় বিজয়বর্গীয়র ফোন এবং সেই ফোন বদলে দেয় অমিত শাহের কর্মসূচি। মেদিনীপুর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সাংগঠনিক কর্মসূচি বদলে হয়ে যায় মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠের জনসভায়। মঙ্গলবার বিকেলে একটায় সেই খবর তিন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পাঁচটি সাংগঠনিক জেলাতেই এখন সাজো সাজো রব।

জানা গেছে, শনিবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে জনসভা থেকে দু’রকম জবাব দিতে তৈরি হচ্ছেন শুভেন্দু। প্রথমত ৭ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় যে পরিমাণ লোক হয়েছিল তার দ্বিগুন লোক জমায়েত করা এবং দ্বিতীয় হল এতদিন তাঁকে লক্ষ্য করে তৃণমূলের পক্ষ থেকে যেসব আক্রমণ করা হয়েছে কড়ায়-গণ্ডায় তার জবাব দেওয়া। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল বিমুখ হওয়ার শুরু থেকেই বলে এসেছেন, রাজনৈতিক সভা থেকে তিনি কোনও রকম রাজনৈতিক কথা বলবেন না, এমনকি দলে থেকে দলের বিরুদ্ধেও চুপ থাকবেন। বিশেষ সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল, শনিবারের আগেই তিনি পুরোপুরিভাবে তৃণমূল মুক্ত হবেন। সেইমতো বুধবারই বিধানসভার এবং দলীয় সদস্য পদ ছেড়েও দেন। সেই কারণেই শনিবারের অমিত শাহের রাজনৈতিক সভা থেকে তৃণমূলকে কড়ায়-গণ্ডায় জবাব দিতে শুভেন্দু অধিকারীর আর কোনও বাধাও থাকছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *