রাজেন রায়, কলকাতা, ২১ ডিসেম্বর: বিজেপিতে যোগদান করেও দু’দিন যাবৎ খাতায়-কলমে তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন তিনি। বিধানসভার সচিবের হাতে ইস্তফা পত্র দেওয়ায় এবং স্পিকারকে ইমেইল করে ইস্তফা পত্র পাঠানোয় তা গ্রহণ করেননি স্পিকার। একইসঙ্গে পার্থক্য ছিল হাতের লেখা এবং ই-মেইলে পাঠানো দুই ইস্তফা পত্রের তারিখেও। সেই কারণেই সোমবার দুপুর দুটো নাগাদ তাঁকে বিধানসভায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনেই সোমবার বিধানসভায় যান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বিধায়ক পদ থেকে তাঁর ইস্তফার আবেদন পত্র তুলে দেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। রীতি অনুযায়ী তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি তা গ্রহণও করেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “২১ ডিসেম্বর দুপুর থেকে শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফা কার্যকর হল। এখন থেকে তিনি আর বিধানসভার সদস্য নন।”
অধ্যক্ষকে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে বেড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “ওনাকে জানিয়েছি আমি স্বেচ্ছায় এই ইস্তফা দিয়েছি। উনিও জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু আমি নিজের ইচ্ছায় পদত্যাগ করলাম তাই তা তিনি গ্রহণ করলেন।” একইসঙ্গে বিধানসভার সামনে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু জানান, তিনি এই ইস্তফা-পর্ব নিয়ে আর কোনও বিতর্ক চান না।
নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে চান তাঁকে নিজে হাতে পদত্যাগপত্র লিখতে হবে। সশরীরে বিধানসভা ভবনে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষের হাতে তা তুলে দিতে হবে। অধ্যক্ষ জানতে চাইবেন, স্বেচ্ছায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন কি না। উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে তা গৃহীত হবে। বিধায়ক পদও খারিজ হবে। কিন্তু গত ১৬ ডিসেম্বর শুভেন্দু হাতে লেখা ইস্তফাপত্র নিয়ে বিধানসভায় এলেও তা অধ্যক্ষের হাতে দিতে পারেননি। সে সময় বিমানবাবু ভবনে ছিলেন না। এরপরই অধ্যক্ষ জানান, এই ইস্তফা তিনি মানতে পারবেন না। সোমবার আবারও শুভেন্দুকে বিধানসভায় আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে তৃণমূল বিধায়ক থেকেও শনিবার অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগদান করেন তিনি। অর্থাৎ শনিবার এবং রবিবার একদিকে খাতায়-কলমে তৃণমূল বিধায়ক এবং অন্যদিকে বিজেপি নেতা হিসেবে দ্বৈত রাজনৈতিক সত্তায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সমস্যা দূর করতেই এ দিন তিনি স্পিকারের নির্দেশমতো হাজির হন বিধানসভায়। এদিন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী গত ১৬ তারিখ বিধানসভায় একটি ইস্তফাপত্র জমা দেন। আমি চলে যাওয়ার পর তিনি এসেছিলেন। আমার অফিস সেটি রিসিভ করলেও তাতে তারিখের উল্লেখ ছিল না এবং সংবিধানের নিয়ম মেনে তা জমা দেওয়া হয়নি। সেদিনই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম শুভেন্দু অধিকারী যেন আমার সামনে উপস্থিত হয়ে ব্যক্তিগতভাবে তা জমা দেন। আমার কিছু প্রশ্নের জবাব যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে। অর্থাৎ যেদিন আমি এই নির্দেশ দিয়েছিলাম সেদিন পর্যন্ত তিনি এই বিধানসভার সদস্য ছিলেন।”
তবে সোমবার যে চিঠি অধ্যক্ষের হাতে জমা পড়েছে তা একদমই নিয়মমাফিক হয়েছে। এরপরই বিমানবাবু বলেন, “কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই চিঠি তিনি লেখেননি। একেবারেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লেখা। এগুলি জানার পর আমি সন্তুষ্ট হয়েই তাঁর ইস্তফাপত্র আজকের তারিখে গ্রহণ করলাম। আজ বিকেলের পর থেকে উনি আর আমাদের বিধানসভার সদস্য রইলেন না।”