আমাদের ভারত, ২৮ জুন: দেশের সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হোক সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দুটি। কেন্দ্রের কাছে দাবি রাখলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এর আগে এই দাবি করেছেন বিজেপি নেতা শিবরাজ সিং চৌহান। এই দুই বিজেপি নেতার আগে এই দাবি করেছিলেন আরএসএস নেতা দত্তাত্রেয় হাসবোলে। তবে বিজেপি নেতা ও আরএসএস নেতার দাবিতে সুর মিলিয়েছেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও।
কিন্তু কেন এই শব্দ দুটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া উচিত সে বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন হিমন্তরা। শনিবার বিজেপির সদর দপ্তর দ্য এমার্জেন্সি ডায়েরিজ নামে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে হিমন্ত বলেন, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দুটি মূল সংবিধানের অংশ কখনোই ছিল না। ফলে শব্দ দুটি অপসারণ করা উচিত। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি ভারতীয় সর্বধর্ম সমন্বয়ের ধারণার বিরুদ্ধে। আর সমাজতন্ত্র কখনোই ভারতের মূল অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ নয়। সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি আরো বলেন, জরুরি অবস্থার ভয়াবহ অতীত ও তার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে জরুরি অবস্থার পরবর্তী প্রভাব মুছে ফেলার এটাই সঠিক সময়। জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংবিধানে এই দুই শব্দ যোগ করেছিলেন। যা ভারতীয় ধারণার বিরুদ্ধে। ফলে তা সরানো হোক।
এই ইস্যুতে আগেই সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তিনি বলেন, এমার্জেন্সি সময় সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দুটি যোগ করা হয় ভারতীয় সংবিধানে। যা সাংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ছিল না। পরে আর শব্দগুলি সরানো হয়নি, এগুলোকে সরানো হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক হওয়া দরকার। এমার্জেন্সি সময় অধিকার ছিল না, ন্যায় বিচার ছিল না, সেই সময় শব্দগুলি যোগ করা হয়। একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ভারতে সমাজতন্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। ধর্মনিরপেক্ষ আমাদের সংস্কৃতির মূল নয়। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া দরকার। একই কথা শোনা গিয়েছে আরএসএস- এর সাধারণ সম্পাদক দাত্তাত্রেয় হাসবোলের গলাতেও।
এরপর দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও সংবিধান বদল সম্পর্কে একই কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, ভারতের সংবিধান ছাড়া অন্য কোনো সংবিধানের প্রস্তাবনায় কখনো কোন পরিবর্তন হয়নি। কারণ সংবিধানের প্রস্তাবনা অপরিবর্তনযোগ্য। কিন্তু সেই পরিবর্তনের পাপ করা হয়েছিল এমাজেন্সির সময়।
তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবনা হলো সংবিধানের প্রাণ। আমাদের সংবিধান প্রণেতারা এখানে যে শব্দগুলি প্রয়োগ করেছিলেন তা ভেবে চিন্তেই করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে দেশবাসীর মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তখনই সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করা হয় সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং অখন্ডতার মতো শব্দগুলি। এই ঘটনাকে দেশের সংবিধানের ক্ষত বলে উল্লেখ করেছেন ধনখড়। তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমনটা ঘটেনি, ভারত একমাত্র দেশ যেখানে এটা হয়েছিল। জনগণের সম্মতি ছাড়া, কোনো আলোচনা ছাড়া সংবিধানের আত্মাকে বদলে দেওয়া হয়েছিল।
তাঁর কথায়, ১৯৭৫ সালে ভারতের গণতন্ত্রের এক অন্ধকার সময়। সেই সময় সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা “আমরা ভারতের জনগণ” ছিল জেলবন্দি। তাহলেই ভেবে দেখুন এই প্রস্তাবনা বদল কত বড় প্রতারণা। সংসদ তখন হয়ে উঠেছিল কাঠের পুতুল। নিষ্ক্রিয় হয়েছিল বিচার বিভাগ। এই অবস্থায় সংবিধান সংশোধন ছিল অবৈধ আচরণের মতো।