আমাদের ভারত, ২১ জুলাই: অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টির স্বামী রাজ কুন্দ্রার গ্রাফতারির খবর সামনে আসতেই তাঁকে নিয়ে উত্তাল নেট মাধ্যম থেকে বলিউড। পর্নোগ্রাফি ছবি তৈরীর মূল চক্রী এই শিল্পপতি বলে অভিযোগ মুম্বাই পুলিশের। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে দিতেন বলেও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। রাজ ও তার সহকারী রায়ান সহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মুম্বই পুলিশ কমিশনার হেমন্ত নাগরালে গ্রেফতারির খবর স্বীকার জানিয়েছেন, এই মামলায় শিল্পা শেট্টি জড়িয়ে আছেন কিনা তার কোনও তথ্য তারা এখনও পাননি তবে রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে। এছাড়া জিতেন্দ্র কন্যা, প্রযোজক একতা কাপুরের নামও জড়িয়েছে এই মামলায় বলে জানা গেছে।
সূত্রের খবর, মডেল সাগরিকা সুমনের অভিযোগের ভিত্তিতেই নাকি এই তদন্তের সূচনা হয়। মডেলের দাবি, ওয়েবসিরিজে অভিনয়ের লোভ দেখিয়ে তাঁকে অডিশন দিতে বলে রাজ। রাজ, তাঁর সহকারী রায়ান এবং এক তৃতীয় ব্যক্তি মডেলের অডিশন নিচ্ছিলেন এবং ভিডিও কলে অডিশন চলাকালীন তাঁকে নগ্ন হতে বলা হয়। সেই প্রেক্ষিতেই মহিলা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মুম্বই সাইবার শাখায়।
ময়ামলা দায়ের হওয়ার পর, গত ২৬ মার্চ রাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সঙ্গে একতা কাপুরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অবশেষে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ।
গ্রেফতারির পর নানান তথ্য উঠে আসছে পুলিশি তদন্তে। জানা গেছে, রাজ ও তাঁর আত্মীয় প্রদীপ বক্সির মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে কথপোকথন এই মামলার অন্যতম প্রধান তথ্য প্রমাণ। পুলিশের দাবি, পর্ন ছবির কন্টেন্ট ও তা থেকে অনেক বেশি মুনাফা উপার্জন নিয়ে বহু কথপোকথন হয়েছে সেই চ্যাটে।
পুলিশের দাবি, রাজের জামাইবাবু প্রদীপ বক্সির লন্ডনের একটি প্রযোজনা সংস্থা ‘কেনরিন লিমিটেড’ এবং রাজের ‘ভিয়ান ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড’ মিলে ‘হটশটস’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ বানায় যার মাধ্যমে চলত পর্নোগ্রাফি। পুলিশ এও জানিয়েছে যে, যদিও রাজ ২০১৯ সালে ‘হটশটস’ অ্যাপটি বিক্রি করে দেয় তবু কন্টেন্ট সাপ্লাই এবং অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত হত তাঁর ‘ভিয়ান ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড’ অফিস থেকেই।
এর আগেও বহু মামলায় নাম জড়িয়েছে এই ৪৫ বছরের শিল্পপতির। এর আগে তিনি ছিলেন আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজস্থান রয়্যাল্সের সহ কর্নধার। ২০১৩ সালে ম্যাচ বেটিং এর অভিযোগে তাঁকে যাবতীয় ক্রিকেটীয় কার্যকলাপ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি আইপিএল থেকে রাজস্থান নির্বাসিত ছিল পুরোপুরি ২ বছর। ২০১৮ সালে অবশ্য তাঁকে ক্লিন চিট দেয় পুলিশ।
পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতারির কিছু দিনে আগেই অর্থ পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অপরাধে তাঁকে তলব করেছিল ইডি।
এছাড়া গ্রেফতারির পর মডেল অভিনেত্রী পুনম পান্ডেও জানিয়েছেন তিনিও রাজের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রতারণা ও চুরির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কিন্তু সেই মামলা ধামা চাপা পড়ে যায়। তিনি এও জানান যে রাজের হাত ধরেই নাকি তিনি এই অ্যাডাল্ট ছবির কারবারে নামেন।
এই একই অভিযোগ করেছেন বিতর্কিত অভিনেত্রী শার্লিন চোপড়াও। শার্লিনের দাবি তিনি রাজের ২০ থেকে ২৫ টি প্রজেক্টে কাজ করেছেন।
এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন অনেক তাড়কাই। ফিল্ম ক্রিটিক এবং প্রযোজক কামাল আর খানও নেট মাধ্যমে রাজকে বেশ তুলোধোনা করেছেন। গায়ক মিকা সিং জানিয়েছেন, তিনি রাজকে একজন ভালো মানুষ মনে করেন। এমনকি রাজের একটি অ্যাপও তিনি দেখেছেন কিন্তু পর্নের মত কোনও জিনিস সেখানে ছিল না। তবে অন্য অ্যাপের কথা তিনি জানেন না। আদালতের রায়ের অপেক্ষায় তিনি আছেন বলে জানান।
এই একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল অভিনেত্রী গেহেনা বশিষ্ঠ। জামিন পাওয়ার পর তিনি জানিয়েছে যে, তিনি রাজের প্রযোজনায় ৩ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং সেগুলি কোনও পর্নফিল্ম নয়, তারা কোন পর্নফিল্ম বানান না বলেই দাবি করেছেন তিনি।
সেই সঙ্গে রাখি সাওন্তও রাজ ও শিল্পার পক্ষ নিয়েই মতামত দিয়েছেন। তাঁর দাবি রাজের ছবি খারাপ করার চক্রান্ত করছে কেও। তিনি এই মুহূর্তে শিল্পা শেট্টির পরিস্থিতি সম্পর্কেও চিন্তা প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমে কোন মন্তব্য করেননি শিল্পা। এমনকি তাঁর শিডিউল শুটিংয়ের কাজও বাতিল করেছেন। তীক্ষ্ণ প্রশ্নগুলিকে এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত অভিনেত্রীর বলে মনে করছেন ওয়াকিবহল মহল।