আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ২৫ ফেব্রুয়ারি: ২০১২ সালে বাঘরোল বা মেছো বিড়ালকে রাজ্য প্রাণীর তকমা দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে। কিন্তু তকমা মিললেও শান্ত স্বভাবের এই প্রাণীকে রক্ষার জন্য সেভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উল্টে বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রাণীটিকে হত্যার বহু ঘটনা সামনে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেই সব নৃশংস ছবি। এবার এই বিলুপ্ত- প্রায় বন্য প্রাণীটিকে রক্ষা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা শের। তাঁদের সাথে আরও দুই সহযোগী সংস্থা স্যাঞ্চুয়ারি নেচার ফাউন্ডেশান ও এইচ পি পারেখ ফাউন্ডেশনও একাজে উদ্যোগী হয়েছে।
রবিবার সুন্দরবনের পাখিরালয়ের বাঘবনে এ বিষয়ে এলাকার সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের একত্রিত করে একটি বিশেষ আলোচনা শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরে উপস্থিত ছিলেন শেরের সম্পাদক জয়দীপ কুন্ডু, বাঘরোল নিয়ে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাম্যদেব বসু ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সম্রাট চক্রবর্তী।
বাঘ ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বন্ধ করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের জন্য বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে জয়দীপদের সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে চলেছে। জঙ্গল কেন্দ্রিক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে এখনও একইভাবে কাজ করছেন তাঁরা। কিন্তু বাঘ সংরক্ষণ শুধু নয়, এবার তাঁরা বাঘরোল বা মেছো বিড়াল সংরক্ষণের বিষয়েও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই গ্রামে গ্রামে এ বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। শুধু গ্রাম নয়, শহর বা আধা শহর এলাকার মানুষ, স্কুল সহ বিভিন্ন জায়গায়ও এ বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। যে এলাকায় এই ধরনের প্রাণীদের অবস্থান রয়েছে, বা যেখানে এদের সাথে মানুষের সংঘাত ঘটছে সেখানেও বন দফতরের পাশাপাশি এই সংগঠনের কর্মীরাও মানুষকে সচেতন করার কাজ করছেন।
জয়দীপ বলেন, “বাঘ, হাতি, গন্ডারের সংরক্ষণ সর্বত্রই হচ্ছে। কিন্তু বাঘরোল বা মেছো বিড়াল কিম্বা খটাশ যাই বলি না কেন এদের সংরক্ষণ সেভাবে হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় অনেকেই এদের হত্যা করছে। আর বাস্তুতন্ত্রে তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সেই কারণে এই বন্য জন্তুদেরও সংরক্ষণ করতে হবে। সংবাদ মাধ্যমকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে মানুষকে সচেতন করার কাজে।”
সাম্য বলেন, “দিনের পর দিন জলাজমি ভরাট চলছে। কংক্রিটের শহরের পরিধি বেড়ে চলছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের বাসস্থান হারাচ্ছে বাঘরোল বা মেছো বিড়ালরা। সেই কারণেই তারা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। তখনই মানুষের সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে। অনেকেই এদের বাঘ ভেবে মেরে ফেলছেন। গ্রামের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন অজানা জন্তু বলে। এ বিষয়ে সকলকেই সচেতন হতে হবে।” সম্রাট বলেন, “এই রাজ্যে প্রাণীর বাসস্থান যদি আমরা চিহ্নিত করতে পারি এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারি তাহলে মানুষের সাথে এদের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে। এদের অস্তিত্বও রক্ষা পাবে।”