আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ১৬ আগস্ট: সামাজিক দূরত্ব শিকেয় তুলে রবিবার ভাঙড়ে জনসভা করল তৃণমূল কংগ্রেস। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শওকত মোল্লার ডাকে এদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সভাতে অংশ গ্রহণ করেন। করোনা উপেক্ষা করে কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক জমায়েত করে মিছিল ও সভা করায় নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যজুড়ে। এদিন বিকালে বাসন্তী রাজ্য সড়কের কিছুটা অংশ অবরুদ্ধ করে এই মিছিল করেন শওকত মোল্লা। যে মিছিলে আসা বেশিরভাগ কর্মী সমর্থকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। খোদ বিধায়কের মুখেও কোনও মাস্ক ছিল না। মাস্ক ছিল না দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূলের কনভেনর পরেশ রাম দাসের মুখে লও।
ফুরফুরা শরীফের পীরসাহেব আব্বাস সিদ্দিকির ওপর আক্রমণের অভিযোগে গত ১০ আগস্ট ঘটকপুকুরে বাসন্তী রাজ্য সড়ক চার ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান আব্বাস অনুগামীরা। সেদিন দুই ২৪ পরগণা ছাড়াও গোটা রাজ্যেই কম বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আব্বাস অনুগামীরা। সেই ঘটনার পাল্টা হিসাবে পরদিন ভাঙড়ের বোদরা অঞ্চলে একটি প্রতিবাদ সভা করেন শওকত। ওই সভা থেকেই শওকত ঘোষণা করেন ১৬ তারিখ ঘটকপুকুরে আরও বড় সভা করা হবে, যেখানে পঞ্চাশ হাজার লোক একত্রিত হয়ে আব্বাসের বিরুদ্ধে কড়া জবাব দেবে। শওকত মোল্লার ডাকে এদিন তৃণমূলের হাজার হাজার কর্মীরা সভাতে যোগ দেন। ভোগালী ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাসসের হোসেন প্রায় এক হাজার বাইক নিয়ে মিছিল যোগ দিতে গিয়ে ৯১ বাস রুট অবরুদ্ধ করে দেন।
অপরদিকে তৃণমূল নেতা মীর তাহের পদমিছিল করে সভাতে যাওয়ার সময় কালিকাপুর রোড একরকম নো এট্রি করে দিতে হয়। ফলে মিছিলের জন্য শুধু বাসন্তী রাজ্য সড়ক নয় পাশাপাশি ভাঙড়ের ৯১ নং রুট, সোনারপুরের এস ডি ৩ নং রুট, মালঞ্চ, ভোজেরহাট, ভাঙড়, বোদরা সর্বত্র রাস্তা নো এন্ট্রি করে দেওয়া হয়। এজন্য বহু মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সন্ধ্যে পর্যন্ত।
শওকত তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কেউ আব্বাস সিদ্দিকি সাহেবকে অপমান করেননি, কেউ তাঁর গাড়িতে হাত দেননি। কেউ তাঁর গায়েও হাত দেননি। পুরোটাই মিথ্যা প্রচার হয়েছে। ধর্মের নামে অশান্তির চেষ্টা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। কেউ কেউ বলছেন আমি নাকি আব্বাস সিদ্দিকির জন সমর্থন দেখে ভয় পেয়েছি। লোকজন কার সাথে আজে আশাকরি আজকের জনসভার পর তা আর নতুন করে বলতে হবে না”। করোনা ভাইরাসের অতিমারি ভুলে কি ভাবে এত মানুষ নিয়ে জমায়েত করলেন? প্রশ্নের উত্তরে শওকত বলেন, “দুটি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে। একটা কোভিড ১৯, আরেকটা সাম্প্রদায়িক বিভেদ কামী শক্তি নামক ভাইরাস। প্রথমটার জন্য ঘরে থাকলেও দ্বিতীয়টার জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে”।
তৃণমূলের এদিনের এই সভা নিয়ে বিজেপি, সিপিএমের নেতৃত্বরা নিন্দা করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা বিজেপির সভাপতি হরিকৃষ্ণ দত্ত বলেন, “ তৃণমূল সভা, মিছিল করলে কোনও অসুবিধা নেই, কিন্তু বিজেপি সভা করতে গেলেই পুলিশ প্রশাসন বাধা দেয়। ওদের বেলায় করোনা ছড়ায় না, ভাইরাস সেই সময় লুকিয়ে থাকে। যত নিয়ম সব বিরোধীদের জন্য। এই সরকার ঘরে ঘরে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিচ্ছে, আজকের মিছিল তার অন্যতম উদাহরণ।” বিজেপির মতোই একইভাবে তৃণমূলের এই সভার সমালোচনা করেছে সিপিএম সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি।