আমাদের ভারত, ২৮ আগস্ট: কেবল নেতাদের কথা নয়, এবার সরাসরি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে “কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবারে” চালু করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমিত ভট্টাচার্য। রাজ্যের যে কোনো প্রান্তের যে কোনো বিজেপি কর্মীর অভাব অভিযোগ বা পরামর্শ এবার সরাসরি শুনবেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি নিজে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে এর আগে এই ধরনের কর্মসূচি হয়নি। এই প্রথম এমন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। তবে দরবার শুরুর তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আগামী মাস থেকে মুরলী ধর লেনের দপ্তরে সপ্তাহে একদিন করে রাজ্য বিজেপির সভাপতি বসতে পারেন বলে সূত্রের খবর। এর জন্য সোমবার নির্দিষ্ট রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
বঙ্গ বিজেপিতে প্রায়শই কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে আসে। বেশিরভাগ সময় নতুন কমিটি বা বিভিন্ন স্তরে নতুন নেতৃত্বের তালিকা প্রকাশিত হলেই তা আরো জোরদার হয়। চলতি বছরে জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষিত হওয়ার পরে একাধিক জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও জেলায় সভাপতি আক্রান্ত হয়েছেন। আবার কোথাও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কর্মীদের কোনো কোনো অংশকে কোণঠাসা করার অভিযোগ করেছেন।
কিন্তু কর্মীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জেলা বা মন্ডলের নেতারা যত সহজে পৌঁছে দিতে পারেন তত সহজে কর্মীরা পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে নেতাদের অনৈতিক কাজের অভিযোগ কর্মীরা তত উপরের স্তরে জানাতেই পারেন না। শমিত সম্ভবত সেই পরম্পরা ভাঙতে চাইছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির যে কোনো কর্মী চাইলেই যাতে সরাসরি সভাপতিকে তার বক্তব্য জানাতে পারে তিনি সেই ব্যবস্থাই করতে চাইছেন।
কিন্তু কেন এই উদ্যোগ? সেই ব্যাখ্যা এখনো প্রকাশ্যে কোনো বিজেপি নেতা বলেননি। তবে সূত্রের দাবি, একতরফা বয়ানের ভিত্তিতে আর দল চালানো হবে না। শুধু নেতাদের কথার ভিত্তিতে সব কিছুর মূল্যায়ণ হবে না। কর্মীদের কথা সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মন দিয়ে শুনবেন। এবার থেকে রাজ্য সভাপতি দু’রকম বয়ানই শুনবেন।
মনে করা হচ্ছে, এর ফলে দলের অন্দরে নিজেই নিজের গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ হবে। তেমনি রাজ্যের কোথাও সাংগঠনিক পরিস্থিতি কেমন তার স্পষ্ট চিত্র সভাপতির কাছে থাকবে।
প্রথমে জানা গিয়েছিল, ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী দরবার শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু তা হচ্ছে না আপাতত। কর্মসূচি চালু করার বিষয়ে সভাপতি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেললেও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। শমীকবাবু জানিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করব। সপ্তাহে একদিন পরে মুরলীধর সেন লেনের অফিসে বসবো। কবে থেকে শুরু হচ্ছে সময় মত সকলে জানতে পারবেন।
সূত্রের খবর, বিলম্ব হতে পারে দুটি কারণে। প্রথমত দলের রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে শমীক এখনো নিজের টিম হাতে পাননি। এখনো পর্যন্ত পুরনো রাজ্য কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কাজ চালাচ্ছেন। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন রাজ্য সভাপতি নতুন কমিটি গড়বেন। নতুন পদাধিকারীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেবেন। সেই কমিটি ঘোষিত হওয়ার আগে পর্যন্ত দলের অন্দরে নানা সমীকরণ চলছে। সেই সব সামলে কমিটি ঘোষণার দিকে এগোতে হচ্ছে শমীককে। বৈঠক এবং নানা স্তরে সমন্বয়কারী আলোচনায় দিনভর তিনি ব্যস্ত থাকছেন। ফলে এই সময় কর্মী দরবার শুরু করেও খুব একটা লাভ হবে না।
শমিকের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, কর্মীরা মূলত নানা সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানের আশা নিয়ে আসবেন। তার সুরাহা করতে হলে পুরো টিমকে সঙ্গে চাই। কারণ এক একটা বিষয়ের দায়িত্ব এক একজনের উপর থাকে। এক একটা এলাকার দেখভালের দায়িত্ব একক জন নেতার উপর থাকে। যতক্ষণ না দায়-দায়িত্ব বন্টন চূড়ান্ত হচ্ছে, ততক্ষণ এই দরবার শুরু করে লাভ নেই। কারণ কাকে কোনটা সমাধানে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। একই সঙ্গে কর্মীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে মুরলীধর লেনের দপ্তরকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই কর্মসূচির জন্য। যাতে কর্মীরা সহজে যাতায়াত করতে পারেন। সেই দপ্তর মেরামতের কাজ চলছে।