চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ১১ ফেব্রুয়ারি: পুরভোটের জন্য বিজেপি সভাপতি থাকাকালীনই বিশেষ রণকৌশল বানিয়ে ফেলেছিলেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, ঐতিহ্যের কারণেই বাংলার প্রতি সংঘের বিশেষ নজর রয়েছে। সেকথা মাথায় রেখে এই বিশেষ রণকৌশল তৈরি করা হয়েছে। আর, শাহর তৈরি সেই ছক ধরেই নাকি এবার এরাজ্যের পুরনির্বাচনের জন্য ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। এমনিতে, পুর বা পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব মাথা ঘামান না। কিন্তু, বিপ্লবী ত্রৈলোক্য মহারাজ থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়- সংঘ এবং বিজেপির ঐতিহ্যের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাংলা মিশে রয়েছে। সেই কারণেই গেরুয়া শিবিরের শীর্ষস্তর থেকে শাহকে পুরভোটের রণকৌশল তৈরির জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলেই সূত্রের খবর।
গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরভোটের জন্য তৈরি এই বিশেষ কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে মেপে চলছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সম্প্রতি, কলকাতায় এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। তিনি পুরপ্রার্থীদের নামের তালিকা বিজেপির রাজ্য নেতাদের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছেন। একইসঙ্গে, বিশিষ্টদের পুরভোটে প্রার্থী করার নির্দেশ তিনি দলের রাজ্য নেতাদের দিয়ে গিয়েছেন। বিজেপি সূত্রে খবর, শাহর বানানো সেই রণকৌশল মেনে এই নির্দেশ দিয়েছেন সন্তোষ। সম্প্রতি, জনজাগরণ যাত্রা থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বিজেপির নেতাদের পরিচয় হয়েছে। এছাড়াও ইতিমধ্যেই দলে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি যোগ দিয়েছেন। তাঁদেরকেই প্রার্থী করার দিকে ঝুঁকতে পারেন বিজেপি নেতারা। এমনিতে পুর বা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রার্থী হচ্ছেন, তেমনটা দেখা যায় না। কিন্তু, এবারের পুরনির্বাচনটার গুরুত্ব বিজেপির কাছে একদম আলাদা। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে এই পুরনির্বাচনকে সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছে দল। সেই কথা মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে রণকৌশল।
বিজেপি সূত্রে খবর, তবে এসব কৌশল নয়। এই পুরভোটে বাজিমাতের টেক্কা রয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্তিনে। তা হল, পুরভোটের পরই তৃণমূলে বড়সড় ভাঙন। পুরভোটের ঠিক পরই ঘাসফুল শিবিরে এই বিরাট ভাঙন ধরতে চলেছে। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘাসফুল শিবিরের বহু ডাকসাইটে নেতার কথাবার্তা পুরো চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। যার জেরে, তৃণমূলের হয়ে পুরভোটে জেতার পর ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল কাউন্সিলররা বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। যেমনটা, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় দেখা গিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই তৃণমূলের জেতা একের পর এক পুরসভা চলে আসবে বিজেপির দখলে। বিজেপি সূত্রে খবর, এটা সম্ভব হতে চলেছে তৃণমূলের কিছু ডাকসাইটে নেতার জন্য। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ভীষণ খাপ্পা। তাই সুযোগ বুঝে নিজেদের অনুগত সব কাউন্সিলরদের বিজেপিতে যোগদানের ব্যবস্থা করে দিতে চান। আর এই সব কাউন্সিলরা নামে তৃণমূলের হলেও আসলে ওই সব ডাকসাইটে নেতাদের কথাতেই উঠবোস করেন। এমনকী, ওই নেতারা বললে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে সেখানে রাজীব গান্ধী-সনিয়া গান্ধী বা মোদী-নাড্ডার ছবি বসানোটা এই কাউন্সিলরের কাছে জলভাত। বিজেপি সূত্রে খবর, এসব কথা মাথায় থাকার জন্যই পুরভোট নিয়ে এখনও পর্যন্ত বেশ নিস্পৃহ দেখাচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের।