আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৫ ডিসেম্বর: বিগ্রেড রাজনৈতিক সভা দেখেছে বহু। কিন্তু রবিবার বাংলার বুকে নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী থাকল বিগ্রেড। লক্ষ কন্ঠে ধ্বনিত হল গীতার বানী; যে মঞ্চ একাধিক বিশ্ব রেকর্ড করল। অনুষ্ঠানে লক্ষ কন্ঠে “হে পার্থসারথী বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য” গান পরিবেশনে বিশ্ব রেকর্ডের অংশীদার হল সংস্কার ভারতী।
রবিবার কলকাতা ময়দানে আয়োজিত হয়েছে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের অনুষ্ঠান। মূল হোতা সনাতন সংস্কৃতি পরিষদ, অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদ, মতিলাল ভারত তীর্থ সেবা মিশন এবং অন্যান্য আরও ধর্মীয় ও সামাজিক আশ্রম। রবিবার কাকভোর থেকে সমাবেশ স্থলে মানুষে-মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সকাল হলেও কুয়াশা চাদরে মোড়া বিগ্রেডে লোকপাবন। বেলা ১০ টা বাজতেই গানে গানে শুরু হয়েছে ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের অনুষ্ঠান।
সঙ্ঘের (আরএসএস –এর) সাংস্কৃতিক সংগঠন সংস্কার ভারতী, পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের শিল্পী দলের নেতৃত্বে গাওয়া হল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ সহ চার টি দেশত্ববোধক গান।
কলকাতায় এই প্রথম এমন আয়োজন। লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে হাওড়া স্টেশনে আসতে শুরু করে মানুষজন। তাঁদের সুবিধার জন্য অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদের পক্ষ থেকে হাওড়া স্টেশনের বিপরীতে মঞ্চ করা হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁদের ব্রিগেড যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে আবার লঞ্চে বা বাসে কলকাতায় আসেন।

বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডের ঐতিহাসিক সভার সাংস্কৃতিক মঞ্চে ৬০ জন সংস্কার ভারতীর শিল্পীর নেতৃত্বে ও পরিচালনায়, গাওয়া হল কাজী নজরুলের বিখ্যাত গান, ‘হে পার্থসারথি বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য-শঙ্খ’ ; যে গান গত তিন মাস ধরে সংস্কার ভারতীর শিল্পীরা নিয়মিত অভ্যাস করেছেন। এমনকি জেলা জেলায় গীতা প্রেমী সংগঠকদের কাছে গিয়েও তারা এই গান অভ্যাস করিয়েছেন। গানের কথা, স্বরলিপি, অডিও ট্রক পাঠিযে দেওয়া হয়েছে। বাংলার প্রতিটি ব্লকে এই গানের অভ্যাসের ব্যবস্থা করা হয়। নজরুলসংগীত গাওয়ার বিশ্ব রের্কড গড়তে এই প্রথম লাখ মানুষ সমবেতসুরে তাঁর লেখা গান গাওয়া হল। এদিন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের জন্য ঐ সংস্থার কর্তারা ব্রিগেডে উপস্থিত ছিলেন।

লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের অন্যতম উদ্যোক্তা রিষড়া প্রেমমন্দির আশ্রমের প্রধান র্নিগুনান্দজী বলেন, ‘নজরুল ইসলামের লেখা এই গান বাংলায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বাংলা ভাষায় গীতার ওপর এর চেয়ে ভালো গান আর লেখা হয়নি। তাই তাঁর গানটিকে বেছে নিয়েছি আমরা। এই গান তাঁর জীবদ্দশা থেকেই বাংলার প্রতিটি মঠ-মন্দির ও আশ্রমে গীতা জয়ন্তীর দিন গাওয়ার রীতি আছে। এটি আমাদের গীতা প্রচারের প্রচলিত সংগীত; যা আজ নতুন করে বিশ্ব রেকর্ড করল।’
সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, “আজ থেকে ছয় মাস আগে বাংলার সন্তসমাজ যখন এই কার্যক্রমের জন্য পরিকল্পনা শুরু করেন তখন থেকেই সাংস্কৃতিক মঞ্চ পরিচালনার জন্য সংস্কার ভারতী’কেই তাঁরা দায়িত্ব দেন। সেই মত সংস্কার ভারতীর শিল্পীরা হে পার্থসারথী বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ গানের অভ্যাস শুরু করে বাংলার জেলায় জেলায়। রবিবার তাই এই নতুন ইতিহাস রচনায় সংস্কার ভারতী নেতৃত্ব দেওয়ায় আমরা গর্বিত।”
পরে শঙ্করাচার্যের বক্তব্য এবং তারপর মূল অনুষ্ঠান গীতাপাঠ শুরু হয়।

