আমাদের ভারত, ২৬ জানুয়ারি: আজও সনাতন সোয়াইনের মনে পড়ে ৩৩ বছর আগে কটক থেকে কলকাতায় আসার পর সত্যব্রত মুখার্জিকে (জলুবাবু) দেখার স্মৃতি।
কী অসম্ভব ব্যক্তিত্বসম্পন্ন! একাধারে রাশভারি, অথচ নরম মনের মানুষ। কত বড় বড় লোকজন আসতেন জলুবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর পুরস্কারের কথা শোনার পর থেকে সনাতনের মনেও আনন্দ। উদ্বেলিতও বলা যেতে পারে। কারণ উনিই তো ছিলেন ‘অভিভাবক’!
সেই সনাতন এখন ৫১ বছরের। জলুবাবু নেই। এখন তাঁর জ্যোষ্ঠ পুত্র, মানে আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখার্জির সহকারী হিসাবে কাজ করেন সনাতন। এই প্রতিবেদককে সনাতন শুক্রবার সন্ধ্যায় জানালেন, রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রবাবু শুক্রবার বিকেলেই কাজে বোম্বে গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী শ্রীলার কাঁচের জিনিসের স্টুডিও আছে। প্রদর্শনীর জন্য তিনি আপাতত দিল্লিতে। জলুবাবুর ছোট ছেলে সৌমিত্র মুখার্জি থাকেন দিল্লিতে।
জলুবাবুর ঘনিষ্ঠ পরিবার বলতে এইই। সনাতনও হয়ে গিয়েছেন পরিবারের একজন। জানালেন, কলকাতায় সানি পার্কে ছিল জলুবাবুর নিজস্ব বাড়ি। কিছুকাল আগে সেটি ভেঙ্গে ফ্ল্যাট হয়েছে। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড সংলগ্ন লাভলক স্ট্রিটের অফিসটা এখনও আছে। আর আছে কৃষ্ণনগরের পাগলাচণ্ডীর বিশাল বাড়িটা। সেখানে আমগাছ আছে। চাষবাস হয়। জলুবাবু সময় পেলেই সেখানে যেতেন। সহযোগিতার চেষ্টা করতেন সাহায্য প্রার্থীদের।
২০১৯ সাল। অশীতিপর জলুবাবুকে প্রার্থী করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়রা। বিজেপি-র ‘অলিখিত নীতি’ও স্পষ্ট, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী কাউকেই টিকিট দেওয়া হবে না। কিন্তু, বঙ্গ বিজেপি-র তখনও বার্তা ছিল, কৃষ্ণনগরে ভোট হয় জলুবাবুর নামেই। শেষমেশ সেখানে প্রার্থী করা হয় কল্যাণ চৌবেকে।
সেই সময় ৮৬ বছরের জলুবাবু বলেছিলেন, ‘নতুন প্রজন্ম আসুক। আমার হৃদয়ের বার্তা থাকল, কল্যাণ জিতে এমপি হন।’ তিনি বুক ঠুঁকে আরও বার্তা দিয়েছিলেন, ‘ওর প্রচারে আমি আসব।’
অশীতিপর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এই বার্তা শুনে গত লোকসভা নির্বাচনে অনেকটাই বুকে বল পেয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। গত বছর মার্চ মাসে প্রয়াত হন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, ‘জলুবাবু বঙ্গ রাজনীতিতে বটবৃক্ষের মতো ছিলেন।’ তাঁকে মরণোত্তর পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে প্রথমবার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জিতেছিলেন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি রাজনৈতিক মহলে জলুবাবু হিসেবেই পরিচিত। ২০০০ সালে তিনি বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সদস্য হন। তিনি কেন্দ্রীয় রাসায়নিক ও সার এবং বাণিজ্য-শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন।
এর পরে ২০০৪, ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে তিনি একই কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলেন। পদ্ম প্রতীকে লড়াই করেছিলেন তিনি। তবে জিততে পারেননি।