আমাদের ভারত, ২ ফেব্রুয়ারি: ভেতরে বীণা হাতে দেবী সরস্বতী বিরাজমান। আর বাইরে বন্দুক হাতে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। এভাবেই কলকাতার নামাজাদা কলেজে বাগদেবীর বন্দনা হলো রবিবার সকালে। যোগেশচন্দ্র ল’ কলেজের এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চুড়ান্ত কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। খাস কলকাতায় এই পরিস্থিতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন। তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাবেন, তাতে তিনি সফল হয়েছেন। তার জন্য তাঁকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশে যেভাবে পুলিশি পাহারায় পুজো হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই পশ্চিমবঙ্গেও পুলিশি পাহাড়ায় পুজো করতে হচ্ছে।”
হরিণঘাটায় একটি স্কুলে স্বরস্বতী পুজোয় বাধার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলে, স্কুলে ঢুকে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ধমকাচ্ছেন, চমকাচ্ছেন। এদিকে যোগেশ চন্দ্র কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সাব্বির আলির বিরুদ্ধে একই অভিযোগে উঠেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, আবার অধ্যক্ষকে এসে ধমকাচ্ছেন। মেয়েদের রেপ করে দেবো বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কলেজ, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মায়ের নামে কলেজ। সেই কলেজে শুনতে হচ্ছে ছাত্রীদের রেপ করে দেওয়া হবে। টাকা পাচ্ছেন না বলে সাব্বির আলি হুমকি দিচ্ছে। হিন্দুদের সরস্বতী পুজোততেও সাবির আলির ভাগ চাই। এই ওয়াকফ সিস্টেম তৈরি করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গোটা রাজ্যকেই ওয়াকফ বানিয়ে ফেলেছেন। আপনি যাই করুন পয়সা মুসলমানদের দিতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর কলেজ যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজে সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের ছাত্র নেতা সাব্বির আলীর বিরুদ্ধে। আদালতের নির্দেশে যার কলেজ ক্যাম্পাসে ঢোকা নিষেধ তার বিরুদ্ধে পুজায় বাধা দিয়ে ধর্ষণ ও প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। চারু মার্কেট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ল’ কলেজের পড়ুয়ারা। সাব্বির ও তার দলবল লাগাতার ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেছে পড়ুয়া ও অধ্যক্ষ নিজে। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন।
এই চাপানউতোর পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশের পাহারায় পুজো হয় রবিবার কলেজে। সেখানে যান শিক্ষামন্ত্রী
ব্রাত্য বসু। তাঁকে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পড়ুয়াড়া। স্লোগান ওঠে উই ওয়ান্ট জাস্টিস। ব্রাত্য বসু বলেছেন, সব ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই। কোর্টের নির্দেশে পুজো হচ্ছে। প্রিন্সিপাল নিজে আছেন। গর্ভনিং বডির প্রেসিডেন্ট মালা রায় আছেন। আমরা পুজো দেখবো বেরিয়ে যাব। কিন্তু ব্রাত্য বসু যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তখনই উই ওয়ান্ট জাস্টিস এর স্লোগান উঠতে থাকে। ব্রাত্য বসু আন্দোলনকারীদের একরকম খোঁচা দিয়ে বলেন, ওরা কথা বলতে চাইছে না, কেবল মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। ভালো করে ওদের ছবি দেখান। ওরা তো চেঁচাচ্ছে। কথা বলতে চাইলে বলবো। আজকে পুজোর দিন, দাবি দাওয়ার দিন নয়। দাবি থাকলে প্রিন্সিপালকে জানাক। আমরা সমাধান করব। তখন এক ছাত্রী অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে জানান, তারা কথা বলতে চান। তাতে পাল্টায় ব্রাত্য বসু বলেন, তাহলে কথা বলতে দিচ্ছো না কেন? তারপর আন্দোলনকারীদের মধ্যে চারজনকে প্রিন্সিপালের ঘরে আসতে বলেন তিনি।