পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ২৪ জুলাই: ঋণগ্রস্ত ফুলচাষিদের ঋণ মকুব সহ ঐ চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ফুলচাষের মানচিত্রে পাঁশকুড়া ব্লকের স্থান প্রথম। ব্লকের মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ও পশ্চিম গুড়তলা, পারলঙ্কা, মাইশোরা, রাজশহর, গোঁসাইবেড় সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম গোলাপ ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত। ফুল কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ‘অর্থকরী ফসল’ হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ার কারণে চাষিরা পায় না সরকারি ঋণের সুযোগ। বন্যা, পোকামাকড়ের আক্রমণ সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফুল চাষের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ বা ‘ফসল বীমা’র সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সেজন্য ওই অর্থকরী ফসল চাষ করবার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুলচাষিদের সরকারি ঋণের উপর নির্ভর না করে বেসরকারি ঋণ বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করতে হয়। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে কয়েক বছর এলাকার ফুলচাষিরা কংসাবতী সৃষ্ট বিধ্বংসী বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ভীষণভাবে আর্থিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। চলতি বছরেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলস্বরূপ চাষের জন্যে নেওয়া ঋণ সময়মত শোধ করতে পারছেন না অনেকেই। সে কারণে আরোহন, IIFL, Bharat financial inclusion Limited প্রভৃতি ভুঁইফোর নন ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলি চাষিদের চড়া সুদে ঋণ দিয়েছিল। সেই টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ফুলচাষিদের নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় পশ্চিম গুড়তলা গ্রামের ফুলচাষি সঙ্গীতা প্রামানিক(বয়স ২৭)কে পাওনাদার এসে চাপ সৃষ্টি করার পর রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরকমই ওই গ্রামগুলির বহু চাষি ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে বর্তমানে ঘরছাড়া। বাগানে ফুল ফুটে রয়েছে। তোলার কেউ নেই। ওই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের দ্বারা সম্মানিত একজন কৃতি কৃষক সরোজ দাসও রয়েছেন।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতি নিরসনে ওই ঋণগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ মকুব সহ চড়া সুদের কারবারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফুলচাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া এবং হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন প্রকল্পে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিদের সহায়তা দানের দাবিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, উদ্যানপালন দপ্তরের মন্ত্রী, জেলা শাসক সহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিক অতনু গুপ্তের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ওই গ্রামগুলি পরিদর্শন করেন এবং পূর্ব গুড়তলা মাড়তলায় ফুলচাষিদের নিয়ে এক সভা করেন। সভায় জেলা আধিকারিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, দপ্তরের সহ অধিকর্তা অঞ্জন দাস, ডঃ দেবাশীষ মান্না। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক।
নারায়ণবাবু অভিযোগ করেন, অতি সত্বর উপরিউক্ত বিষয়ে সরকারিভাবে পদক্ষেপ করা না হলে আরও অনেক ফুলচাষি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে।