রবিনসনের ছায়া ভবানীপুরে! ভাইয়ের কঙ্কালসার দেহ আগলে দিদি

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৪ এপ্রিল: লকডাউনের মধ্যেই ৫ বছর আগের শেক্সপিয়র সরণির দুঃস্বপ্ন ফিরে এল শহর কলকাতায়। এবার ভবানীপুরে মাধব চ্যাটার্জি লেনে মৃত ভাইয়ের দেহ আগলে বসে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হল এক দিদিকে। মৃত শান্তনু দে(৪৮)-র দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। আর দিদি মহাশ্বেতা দে আটক করে (৫৩)-কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

শহরে দুঃস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছে কলকাতার শাসকদলের কাউন্সিলাররা। বাড়ি বাড়ি বা আবাসনের ফ্ল্যাটে গিয়ে খাবার বণ্টন করছেন তাঁরা। ভবানীপুরে তেমনই এক আবাসনের ফ্ল্যাটে খাবার দিতে গিয়ে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অসীম বসুর লোকজন দেখেন, ভাই মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাঁর কঙ্কালসার মৃতদেহ আগলে বসে রয়েছেন তাঁর দিদি। ফ্ল্যাটের ভিতরে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, দুর্গন্ধ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার মাধব চ্যাটার্জি লেনে। এদিনের এই ঘটনা রবিনসন স্ট্রিটের সেই ঘটনাকেই মনে করিয়ে দিয়েছে। ঘটনার কথা জানতে পেরে অসীমবাবুও সেখানে যান। তিনি থানায় খবর দিলে পুলিস এসে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সঙ্গে তাঁর দিদিকেও হাসপাতালে পাঠানো হয়।পুলিশ জানিয়েছে, ৭ দিন আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যেভাবে মারা গিয়েছিলেন, সেভাবেই পড়ে রয়েছেন। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে। তবে মৃতের দিদি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ।

অসীমবাবু বলেন, দলের এক কর্মী ওই পাঁচতলা আবাসনের একতলায় থাকে। আবাসনের তিনতলায় থাকা ওই দুই ভাইবোনকে প্রতিদিনই খাবার দিতে যায় দলীয় কর্মীরা। এদিন তারা ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে ডাকতেই মহাশ্বেতাদেবী বেরিয়ে আসেন। দলের কর্মীরা তাঁকে বলে, খাবার যে তারা দিচ্ছে, তার একটি ছবি নিতে হবে। এই কথা বলে দু’জন ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখে, শান্তনুবাবুর দেহ পড়ে রয়েছে। তীব্র দুর্গন্ধ। সারা শরীরে পচন ধরেছে। দেহ কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। তা দেখেই ওই দু’জনে ছুটে এসে আমাকে জানায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে যাই এবং দুর্গন্ধে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপরই পুলিশকে খবর দিই।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই ভাইবোন তেমন কোনও কাজ করতেন না। কারও সঙ্গে মেলামেশাও করতেন না। নিজেদের জমি প্রোমোটারকে দিয়ে তারা ওই ফ্ল্যাটটি পেয়েছিলেন। কিভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা জানতে মৃতের দিদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *