জে মাহাতো, আমাদের ভারত, রামনগর, ২০ নভেম্বর: যতটা গর্জন হয়েছিল, ততটা বর্ষণ হল না। আসলে একেবারেই বর্ষণ হল না। জল্পনায় জল ঢেলে শুভেন্দু অধিকারী ফের নিজেকে তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দাবি করলেন।
বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগরে শুভেন্দু অধিকারীর ডাকে এক সমবায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে তিনি জানিয়ে দেন, দল তাকে বাদ দেয়নি তিনিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে যাননি, তিনি তৃণমূলেই আছেনl তিনি এখনো রাজ্যের একজন মন্ত্রী ও দলের সক্রিয় সদস্য। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী রেখেছেন। উনিও তাড়াননি আর আমিও ছেড়ে যাইনি।” কার্যত এদিনের সভাতেও তৃণমূলে নিজের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রেখেই গেলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
এদিনের সভায় থেকে তিনি রাজনৈতিক কথাবার্তা তেমন কিছুই বলেননি l রাজনৈতিক বক্তব্য এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, সমবায় সমাবেশে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলা ঠিক হবে না। মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগরের দেশের মানুষ আমরা তাই আমরা অনৈতিক কথাবার্তা বলি না। তবে দলের সঙ্গে মতান্তর যে মেটেনি তা পরিস্কার করে দেন এবং মতান্তর থেকে যে বিচ্ছেদও হতে পারে সেই ইঙ্গিত দিয়ে দলে তাঁর অবস্থান নিয়ে আবারও প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিলেন। তিনি বলেন, বহু দলীয় গণতন্ত্রে সময় সময় রাজনৈতিক মতান্তর বিভেদ হয় আর বিভেদ থেকে বিচ্ছেদও হয়। যতক্ষণ নিয়ন্ত্রকরা তাড়াননি বা আমি ছাড়িনি ততক্ষণ অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক কথা বলা উচিৎ নয়।
জেলার রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর বিপক্ষ গোষ্ঠী হিসেবে বরাবরই অখিল গিরি পরিচিত। আর সেই অখিল গিরির খাসতালুক রামনগরে বৃহস্পতিবার সমবায় সমাবেশ করেন শুভেন্দু। যেখানে একেবারে নজরকাড়া জনস্রোত। আর সেই মঞ্চ থেকে ফের যেন ফিরহাদকে কটাক্ষ করলেন শুভেন্দু। মঞ্চে উপস্থিত থাকা একের পর এক বিশিষ্টজনের নাম বলতে বলতে শুভেন্দু বলেন, “দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ সারির সকলের নাম বলতে বললে বলে দেব। একদিন- দুদিনের লোক নয় আমি। বসন্তের কোকিলও নই। তাই সবার সঙ্গে আত্মিক পরিচয় আছে। আর শুধু ভোট চাই, ভোট দাও, ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও একথা আমি বলি না।” কয়েকদিন আগে রামনগরে কালী পুজোর উদ্বোধন এসে এই সমবায় সভাকে “মেগা শো” হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন শুভেন্দু নিজেই। তাই এদিনের মঞ্চ থেকে শুভেন্দু কোনও রাজনৈতিক বার্তা দেন কিনা সেদিকে নজর ছিল সকলের। তবে শুভেন্দু সে সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে স্পষ্ট বক্তব্যে বলেন, “আমি যেখানে কর্মসূচি করতে যাই তারপরে ওই এলাকায় যদি কোনো কর্মসূচি থাকে আমি সেটা বলে আসি জনগণকে। যেমন আমি নন্দীগ্রামে বিজয়া সম্মেলনে বলেছিলাম ১০ই নভেম্বর রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের বর্ষপূর্তিতে আপনারা আসুন। সেখানেও লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম হয়েছিল। আমি রামনগরের কালী পুজো উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করে গিয়েছিলাম রামনগরে আসছি সমবায়ীদের মেগা শো হবে। পলিটিক্যাল মেগা শো নয়। এইযে দেখছেন কুড়ি হাজার সমবায়ীকে এক জায়গায় জড়ো করা এটা আন্দোলনের সঙ্গে দশকের পর দশক যুক্ত না থাকলে একদিনে হয় না।”
শুভেন্দু স্পষ্ট করে আরও বলেন, “অনেক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন আশা নিয়ে। কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারী স্থান-কাল-পাত্র জানে। যেমন ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের শহীদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম রাজনীতির কথা বলি না বলবো না। কুড়ি সালে নতুন বলছি তা নয়। সমবায়ের মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলবো না রাজনীতির কথা। আজকে এখানে সমবায়ীদের মেগাশো হল।” শুভেন্দুবাবু বলেন তিনি যে সমস্ত পদে রয়েছেন সেগুলোতে তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধিl কারো মনোনীত প্রতিনিধি ননl বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে বড়োসড়ো সমাবেশ করতে চলেছেনl মনে করা হচ্ছে সেই সমাবেশ থেকে তিনি দেখাতে চান তৃণমূলের কত লোক তাঁর পক্ষে রয়েছেনl
বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর এই সমবায় সমাবেশ রামনগরের আরএসএ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। ৬৭টি গোলাপ দিয়ে শুভেন্দুকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এদিনের এই সমাবেশের সূচনা হয়। প্রায় কুড়ি হাজার সমবায়ী মানুষ এদিনের এই সমাবেশে অংশ নেন।