পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য শান্তিপুর কলেজের

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ২৩ জুলাই:
ভারতবর্ষের তিন পন্ডিতের এক পন্ডিত নদিয়ার শান্তিপুরের লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র জন্মগ্রহন করেন ১৮৯৫ সালের ২৩ জুলাই। এবছর ১২৫ বছর পূর্ণ হল তাঁর জন্মের৷ অত্যন্ত মেধাবী লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র এমএ, বিএল, কাব্য সাংখ্যা তীর্থ ডিগ্রী লাভ করেন কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে৷ ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইনি পেশা ছেড়ে দিয়ে শান্তিপুরের পৈতৃক বাড়িতেই ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারে “শিল্পাশ্রম” তৈরী করেন৷ ১৯৩৪ সালে কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দিকে অগ্রসর হলে তার তীব্র প্রতিবাদ করেন আরেক পন্ডিত মদন মোহন মালব্য কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই উপদল “জাতীয় কংগ্রেস দল” গঠন করলে পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র তাতে যোগ দেন৷ ১৯৩৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বাংলার প্রেসিডেন্সি ডিভিশন থেকে পন্ডিত মদন মোহন মালব্যের “জাতীয় কংগ্রেস দলের” প্রার্থী হয়ে কংগ্রেস দলের প্রার্থী হেমন্ত সরকারকে পরাজিত করেন৷ এরপর কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন৷ ১৯৪৬ সালে কলকাতা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র৷ ১৯৪৮ সালে অস্থায়ী পার্লামেন্ট গঠন হলে ড: আম্বেদকরের নেতৃত্বে গঠিত ভারতীয় সংবিধান রচনা কমিটির সদস্য হন৷ কিন্তু পন্ডিত জওহর লাল নেহরুর চাটুকারিতা না করার জন্যই বাঙালী পন্ডিতকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ তাই সংসদে তাঁর কোনও মূর্তি নেই বলে আক্ষেপ রয়েছে তাঁর ঘনিষ্টদের৷ আসল পন্ডিতের প্রসারতাকে যে দাবিয়ে রাখা যায় না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সংসদে দেওয়া তাঁর বক্তৃতামালা থেকে৷ তাঁর ক্ষুরধার যুক্তির কাছে পন্ডিত নেহরুও অসহায় বোধ করতেন৷

১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচনেও পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্র থেকে পুনরায় হেমন্ত সরকারকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন৷ পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র এবং ড: শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় দু’জন ভিন্ন মতাবলম্বী হলেও ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় নদিয়ার বিস্তৃত অংশ চলে যায় পূর্ব পাকিস্তানে৷ বৈষ্ণব প্রধান অঞ্চল নদিয়ার বিস্তৃর্ণ অংশকে ভারতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র জওহর লাল নেহরুকে বোঝাতে সক্ষম হলে ১৮ আগষ্ট শান্তিপুর সহ নদিয়ার বিস্তৃর্ণ অংশ আবার ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ এছাড়া শান্তিপুরের রেল স্টেশন তাঁর জন্যই সম্ভব হয়েছে৷ কবিগুরুর শান্তিনিকেতনের আদলে শান্তিপুর কলেজ প্রতিষ্টা তিনিই করেন বেশ কয়েকজন মানুষের সহযোগিতায়৷ শান্তিপুর পৌরসভার পৌরপতি, নদিয়া জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদের দায়িত্ব সামলেছেন৷ এছাড়া শান্তিপুরের পূরাণ পরিষদ, সাহিত্য পরিষদ, পাবলিক লাইব্রেরিতেও তাঁর অবদান রয়েছে বলে জানাগেছে৷

১৯৫৩ সালের ২৫ জুলাই বাগ্মী সাংসদ পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের জীবনাবসান হয়৷ পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রর সুপুত্র কাশিকান্ত মৈত্র পেশায় ব্যারিস্টার ছিলেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন। তার সুপুত্র সুব্রত মৈত্র পেশায় সুদক্ষ চিকিৎসক ছিলেন যিনি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক ছিলেন। নদিয়ার শান্তিপুর প্রত্যেকেরই জন্মসূত্রে নাড়ির টান। বারে বারে এসেছেন, নানান জনহিতকর বিষয় নিয়ে। শান্তিপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং শান্তিপুর কলেজের সুবিশাল স্থাবর সম্পত্তি পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের দান করা। বিতর্কিত বিষয় হলেও সে সময় শান্তিপুরে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকা অনেকেই তাঁকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেননি। এমনকি আজও রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় তাঁর একটি আবক্ষমূর্তির ন্যূনতম অনুমতি পর্যন্ত মেলেনি। প্রতিবছর রেল যাত্রী সমিতির পক্ষ থেকে এই বিশেষ দিনটিতে তাঁর ছবিতে মাল্যদান করা হয়। রেলওয়ে টিকিট কাউন্টারের উপরে এই ছবি টাঙানোর উদ্যোগও কয়েক বছর আগে গ্রহণ করে সমিতি।

অন্যদিকে বেশ খানিকটা বিলম্বে হলেও শান্তিপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ লক্ষ্য করা গেল তার মূর্তি পরিষ্কার করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *