চন্দননগরের বিপ্লবীদের সম্মান, প্রশাসনকে চিঠি পরিবেশ আকাদেমির

আমাদের ভারত, ২ অগাস্ট: এবারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘বিপ্লবতীর্থ’ চন্দননগরের বিপ্লবীদের সম্মান জ্ঞাপন বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করল পরিবেশ আকাদেমি। সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং সম্পাদক শংকর কুশারী সংস্কারের জন্য স্থানীয় ২১টি মূর্তির তালিকা প্রশাসনের কাছে পেশ করেছে।

মহকুমা শাসক, মহানাগরিক ও পুর কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, “দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আমাদের প্রিয় শহর চন্দননগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বাভাবিকভাবেই আগামী ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করার অন্যতম অঙ্গ হিসেবে শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিপ্লবীদের মর্মর মুর্তিগুলিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা ভাবা হচ্ছে।

এছাড়াও আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি শহরের বিপ্লবীদের মধ্যে অগ্রগণ্য দুই ব্যক্তিত্ব বিপ্লবী চারুচন্দ্র রায় এবং কানাইলাল দত্তের জন্মদিন ও বিপ্লবী মাখনলাল ঘোষালের প্রয়াণ দিবসের দোরগোড়ায়। চন্দননগরের দুই মহান সন্তান শিক্ষাবিদ চারুচন্দ্রের জন্ম ১৮৭০ সালের ২৫ শে আগস্ট এবং ঘটনাক্রমে তাঁরই শিষ্য বিপ্লবী শহিদ কানাইলালের জন্ম ১৮৮৮ সালের ৩০ শে আগস্ট। কুখ্যাত চার্লস টেগার্ট পরিচালিত পুলিশের হাতে মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয়ে ১৯৩০ সালের ২রা সেপ্টেম্বর চন্দননগরে মারা যান বিপ্লবী মাখনলাল ঘোষাল।

প্রতিবছরের মতো এবারেও এই দিনগুলিতে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে মহান এই মানুষগুলিকে সম্মান জানাতে আগ্রহী শহরের নাগরিক সমাজ। মূলতঃ এঁদের মূর্তিতে মাল্যদান এবং প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে দিনগুলি উদযাপিত হয়ে থাকে।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বারবার অনুরোধ উপরোধ করা সত্বেও নিয়মিতভাবে এই মূর্তিগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। বিশেষ করে শহীদ মাখনলালের মূর্তিটির অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে চার্চ সংলগ্ন মাখনলালের মূর্তিটিতে তো বিপ্লবী শহিদের নামটি পর্যন্ত পড়া যাচ্ছে না! একই সঙ্গে শহিদ মাখনলাল ঘোষালের দাহস্থলটি এবং সেই স্থানে অবস্থিত ফলকটিরও অবিলম্বে সংস্কার করা উচিত এবং আগামী ১৫ই আগস্টের আগেই জরুরি ভিত্তিতে এই সকল সংস্কারের কাজগুলি করে ফেলা দরকার। আমরা মনে করি, এই কাজগুলি সুসম্পন্ন করার মত আর্থিক সঙ্গতি স্থানীয় প্রশাসনের আছে।

এরপরও প্রয়োজনে এবং প্রশাসনের অনুমতি পেলে, এই মূর্তিগুলির যথাযথ দেখভাল করতে শহরের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজি আছে। চন্দননগরের নাগরিক সমাজের কাছে আমাদের অনুরোধ, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন এবং আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।

সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধার্থে এই আবেদন পত্রের পরিশিষ্ট অংশে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তির তালিকা যেগুলি জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১৫/০৮/২০২২ এর আগেই সংস্কার ও পরিষ্কার করা প্রয়োজন, তার একটি তালিকা সংযোজিত করা হল—

১) স্ট্র্যান্ড সংলগ্ন মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি (পরিষ্কার করা)
২) রবীন্দ্রভবনের সম্মুখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
৩) নৃত্যগোপাল স্মৃতি মন্দিরের সম্মুখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
৪) রানীঘাট অঞ্চলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
৫) পাতালবাড়ি সংলগ্ন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ও ফলক (পরিষ্কার করা)
৬) প্রবর্তক আশ্রম সংলগ্ন ঋষি অরবিন্দ ঘোষের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
৭) হাটখোলার অরবিন্দ কাননে ঋষি অরবিন্দ ঘোষের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
৮) চন্দননগর কলেজ অন্তর্ভুক্ত বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর মূর্তি (পরিষ্কার করা)
৯) মিউজিয়ামের বিপরীতে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি (পরিষ্কার করা)

১০) তালডাঙার মোড়ে স্বামী বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতার মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১১) উর্দিবাজার অঞ্চলে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১২) প্রবর্তক আশ্রম সংলগ্ন বিপ্লবী মতিলাল রায়ের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১৩) চার্চ সংলগ্ন শহীদ মাখনলাল ঘোষালের মূর্তি (নাম পুনর্লিখন ও পরিষ্কার করা)
১৪) চার্চ রোড ও স্ট্র্যান্ড রোডের সংযোগস্থলে শহীদ কানাইলাল দত্তের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১৫) কলেজের সম্মুখে বিপ্লবী চারুচন্দ্র রায়ের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১৬) কলেজের সম্মুখে বিপ্লবী কালিচরণ ঘোষের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১৭) কলেজের সম্মুখে বিপ্লবী হরিহর শেঠের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১৮) বড়বাজার ভূদেব মুখার্জি রোডে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি (পরিষ্কার করা)
১৯) বক্সীগলি অঞ্চলে জি. টি. রোডের উপর ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তি (পরিষ্কার করা)
২০) বোড়াইচন্ডীতলায় শহীদ মাখনলাল ঘোষালের স্মৃতি ফলক (সংস্কার ও পরিষ্কার করা)
২১) পাতালবাড়ি সংলগ্ন ভাষা শহীদ স্মারক ও প্রাঙ্গণ (পরিষ্কার করা)।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *