Biharinath Bridge, Damodar, দামোদরে বিহারীনাথ সেতু নির্মাণের দাবি শালতোড়ার অধিবাসীদের

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৯ জুলাই: দামোদর নদের উপর আসানসোল- বার্নপুরের সঙ্গে শালতোড়ার সংযোগকারী সেতু নির্মাণের জন্য শালতোড়ার প্রায় তিরিশটি গ্রামের অধিবাসীরা সোচ্চার হয়েছেন। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা দামোদর বিহারীনাথ সেতু বন্ধন কমিটি গড়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। শালতোড়ার সঙ্গে আসানসোল ও বার্নপুরের বাসিন্দারাও সামিল হয়েছেন। কমিটির পক্ষ থেকে মিছিল, ধর্না প্রসানিক মহলে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে, তবুও প্রশাসনের টনক নড়েনি। নির্বাচন এলেই সমস্ত রাজনৈতিক দল পাকা সেতুর যৌক্তিকতা স্বীকার করে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি।

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শুধুমাত্র প্রশাসনিক টালবাহানায় তাদের রুজিরুটি, চিকিৎসা, লেখাপড়া সঙ্কটে পড়েছে। তাই দামোদর নদের ওপর পাকা সেতু না হলে তারা আরও বড় আন্দোলনে নামবেন। তাদের বক্তব্য, এই সেতু নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত। সেতুর বিষয়ে মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া)-এর বক্তব্য, এনিয়ে তার তেমন কিছু জানা নেই। খোঁজ নেবেন। পূর্ত দফতরের বক্তব্য, রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক উদ্যোগী হয়েছেন। দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণও করেছেন। শালতোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মতে, এই এলাকায় দামোদর নদের খেয়া পারাপারের জন্য প্রতি বছর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে দরপত্র ডাকা হয়। যারা দরপত্র পেয়ে থাকেন তারাই খেয়া পারাপারের পরিবর্তে অস্থায়ী কাঠের সেতু বানিয়ে লোকজনকে পারাপার করান। তারা এনিয়ে স্পষ্ট কিছু জানতে পারছেন না। তাদের দাবি, যখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না তখন বড় আন্দোলনের পাশাপাশি ভোট বয়কটের পথে যেতে পারেন।

উল্লেখ্য, বর্ষার শুরুতে গত মাসে ডিভিসি, পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়ায় ভেসে গিয়েছে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো। যার ফলে বন্ধ দামোদর পেরিয়ে বার্নপুর- আসানসোল শিল্পাঞ্চলে যাতায়াত। শালতোড়া ব্লকের এই এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভর বার্নপুর- আসানসোল শিল্পাঞ্চলের ওপর। এই এলাকাবাসীদের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, হাটবাজার সব কিছুই বার্নপুরে। শালতোড়া থেকে বার্নপুর- আসানসোল যেতে হলে কাঠ ও বাঁশের অস্থায়ী ও বিপদজনক সেতু দিয়ে দামোদর নদ পার হতে হয়। বর্ষা এলে জলের তোড়ে ভেঙ্গে যায় সেই সেতু। এ বারও বর্ষার শুরুতেই ভেঙ্গে পড়েছে সেই অস্থায়ী সেতু। এতে চরম সমস্যায় পড়েছেন শালতোড়া ব্লকের লক্ষাধিক মানুষ। অস্থায়ী সেতু ভেঙ্গে গেলে ডিসেরগড় সেতু দিয়ে দামোদর পেরতে তাদের ৩০-৩৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এজন্য দীর্ঘ সময় ও প্রচুর সময়ের অপচয় হয় প্রতিদিন। তাই অনেকেই রুজিরুটি হারাতে বসেছেন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, প্রশাসন কিছু করেনি, আর জনপ্রতিনিধিরা প্রতি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।

দামোদর- বিহারীনাথ সেতু বন্ধন কমিটির সভাপতি তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল নেতা সুবল চক্রবর্তীর মতে, দামোদর নদের ওপর থাকা কাঠের অস্থায়ী সেতু পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় সেতুটি জলের তোড়ে ভেঙ্গে গেলে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঝুঁকি নিয়ে বর্ষার উত্তাল দামোদর, খেয়ায় পারাপার করতে হয়। বহু বছর ধরে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি তুলে আসা হচ্ছে, কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। অথচ বাঁকুড়ার দিকে ঈশ্বরদা, দিঘি, শালতোড়া, কেশপুর, ভিতরডি, সরাগডি-সহ প্রায় ৩০টি গ্রাম এবং পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুর, কালাঝরিয়া, আসানসোল-সহ একাধিক এলাকার বাসিন্দারা এই সেতু পেরিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। মেজিয়া বা ডিসেরগড় সেতু পেরিয়েও আসানসোল, বার্নপুরের যাতায়াত করা যায়। তবে সে জন্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা পেরতে হয়। অন্যদিকে, অস্থায়ী কাঠের সেতুটি দিয়ে মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তা যেতে হয়। শালতোড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাদের অনেকেই আসানসোলের স্কুল কলেজে পড়তে যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, জমির ফসল বিক্রি করতে যান। নিয়মিত তাদের যেতে হয়। পাকা সেতু হলে সংশয়, চিন্তা, কষ্ট, সময় ও খরচ সব কিছু কমলে উপকৃত হব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *