জে মাহাতো, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর, ১২ নভেম্বর:
পর্যটন ক্ষেত্র ঝাড়গ্রাম জেলার চিল্কিগড়ের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে বড়সড় সাফল্য পেলেন বিদ্যাসগর, যাদবপুর ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম, ঝাড়গ্রাম জেলার চিল্কীগড়ে ভেষজ উদ্ভিদের চিহ্নিত করণ এবং গ্লোবাল অবস্থান নির্ণয়ের জন্য অত্যাধুনিক রিমোর্ট সেন্সিং অ্যান্ড গ্লোবাল ইনফরমেশান টেকনোলজি ব্যবহার করে যৌথ ভাবে সাফল্য লাভ করলন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
নতুন ভাবে সেজে উঠা ঝাড়্গ্রাম জেলার জামবনী ব্লকের চিল্কিগড় পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে শুধু যে কনকদুর্গা মন্দিরের জন্যই প্রসিদ্ধ তা নয়, এখানকার জঙ্গলে রয়েছে নানান প্রজাতির গাছপালা এবং যার বেশির ভাগ উদ্ভিদই কিছু না কিছু ভেষজ গুন সম্পন্ন। বিদ্যাসাগর, যাদবপুর ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগের এই কর্মপ্রচেষ্টা সাম্প্রতিক ট্রপিক্যাল রিসার্চ জার্নালে { ৭(২): ৪৪০–৪৫১, ২০২০} যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও বন বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অমল কুমার মণ্ডল এবং উনার অধীনে গবেষণারত বর্তমানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সেক মহম্মদ আবু ইমাম সাদী, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিমোর্ট সেন্সিং বিভাগের গবেষক সুব্রত সরকার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওসিনোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ইসমাইল মণ্ডল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জীববৈচিত্র্য বিভাগ, ২০১৮ সালে বায়োডাইভারসিটি বা জীববৈচিত্র সংরক্ষিত এলাকা হেরিটেজ সাইট হিসাবে চিল্কিগড়কে চিহ্নিত করে। এই চিল্কীগড় আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এখন নতুন জেলা ঝাড়গ্রামের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর আগের চিল্কীগড়ের উপর গবেষণা হয়েছে কিন্তু এই প্রথম এত বর্ধিত আকারের গবেষণা হলো। তাও আবার তিন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে। চিল্কীগড়ের ভেষজ উদ্ভিদ এবং অনান্য সমস্ত উদ্ভিদের বিজ্ঞান সম্মত ভাবে চিহ্নিত করণ শুধু নয় তাদের গ্লোবাল অবস্থান চিহ্নিত করনের জন্য অত্যাধুনিক রিমোর্ট সেন্সিং অ্যান্ড গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনলোজি ব্যবহার করেই যৌথ ভাবে সাফল্য পেলেন বিদ্যাসাগর, যাদবপুর ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
বর্তমান ভারতবর্ষে প্রায় ৪৭৫০০ উদ্ভিদের বিজ্ঞান সম্মত ভাবে চিহ্নিত করন হয়েছে তার মধ্যে ১৮,০০০ হছে সপুষ্পক উদ্ভিদ বা অ্যাঞ্জিওস্পার্ম। যা কিনা সারা পৃথিবীর ১১.৪%। পশ্চিমবাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অঞ্চল যেমন পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এন্য নবগঠিত ঝাড়গ্রাম জেলা জীববৈচিত্রে ভরপুর।
তার মধ্যে চিল্কীগড় সবচেয়ে বেশী জীববৈচিত্রের ভান্ডার রয়েছে বলা যেতে পারে, বা লোকাল হটস্পটও বলা যেতে পারে। হটস্পট হল সেই এলাকা,যেখানে সবচেয়ে বেশি এন্ডেঞ্জার এব্ং থেটেন্ট প্রজাতি উদ্ভিদ পাওয়া যায় এবং জায়গাটা সব সময় আন্ডার এথ্রোপোজেনিক থ্রেটের মধ্যে থাকে। আর এই থ্রেট থেকে উদ্ভিদ ও প্রানীদের বাঁচানোর জন্যই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
.
এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ১৮৪ টি প্রজাতির (স্পিসিস)ভেষজ উদ্ভিদ যা কিনা ১৫৫ গণ (জেনেরা) এবং ৫৬ গোত্রের মধ্য অবস্থান করছে। সবচেয়ে বেশি যে গোত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে তা হল ফেবেসী (১৬), পোয়েসী (১৩), এস্টারেসী (১৩), ইউফরবিয়েসী (১৩), মালভেসী (১১), অ্যাপোসাইসেসী (১০), অ্যারেসী (৯), অ্যাকান্থেসী (৮), সলানেসী (৭), রুবিয়েসী (৬), ভারবিনেসী (৬)। এর মধ্যে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ৯৮টি, বড় গুল্ম ৩৩টি, বড় বৃক্ষ ৩৪টি, লতানো উদ্ভিদ ১৮টি এবং এপিফাইটিক ১টি। এই গবেষণা ভবিষ্যত গবেষণার চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। কোখায় কত এবং কেমন ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে তা কম্পিউটারের মাউসে একটা ক্লিকেই ফুটে উঠবে। এটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ ভাবে সহয়তা করবে বলে জোরালো মত প্রকাশ করেছেন এই চার জন গবেষক তথা অধ্যাপক। উদ্ভিদের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে এই গবেষণা বিশেষ ভাবে সহায়ক হবে বলে, গবেষক দলের কর্নধার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা ও বনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের কোর্ডিনেটর, ডি.আর.এস-স্যাপ-২ অধ্যাপক ডঃ অমল কুমার মণ্ডল মনে করেন। একটি বিশেষ স্থানকে ঘিরে এমন উন্নত ধরনের গবেষণা পশ্চিমবাংলায় এই প্রথম। অধ্যাপক মণ্ডল আরও মনে করেন যে এই ধরনের গবেষণা যত বেশি হবে তত আমাদের রাজ্যে, জীব-বৈচিত্রের যে অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে, তা যেমন বিজ্ঞান সম্মত ভাবে চিহ্নিত করন হবে অন্য দিকে সংরক্ষণের বিষয়টাও সমান ভাবে গুরুত্ব পাবে, যা কিনা বর্তমান সময় খুবই গুরুতবপূর্ণ।