Kasba Case, BJP, কসবা ল’ কলেজে গণধর্ষণ নিয়ে রিপোর্ট, রাজ্যকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের সুপারিশ

আমাদের ভারত, ৮ জুলাই: কসবা কান্ড নিয়ে নিরপেক্ষ, উচ্চ পর্যায়ের বা কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত করার সুপারিশ করল কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ করার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। মঙ্গলবার কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ল বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নড্ডার কাছে। ওই কমিটির সদস্যরা সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান।

সঞ্জয় ময়ূর জানান, “২৫ জুন সাউথ কলকাতার ল’ কলেজে এক অত্যন্ত নৃশংস ও গোষ্ঠী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা এতটাই দুঃখজনক ও যন্ত্রণাদায়ক যে, ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি গভীরভাবে মর্মাহত হন। তিনি এই বার্তা দিতে চাইলেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শাসনে না থাকলেও বাংলার প্রতিটি বোন ও কন্যার সুরক্ষা ও সম্মানের দায়িত্ব আমাদের। সেই কারণে তিনি একটি চার-সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।”

সঞ্জয়বাবু বলেন, “আমি সেই কমিটির সদস্য ছিলাম। এ ছাড়াও বিপ্লব দেব, মানন কুমার মিশ্র ও মীনাক্ষী লেখি ছিলেন। আজ সকালে আমরা আমাদের তদন্ত রিপোর্ট জাতীয় সভাপতির হাতে তুলে দিই। আমি সংক্ষেপে এই ঘটনার কথা ও যা দেখেছি তা আপনাদের জানাতে চাই।

এই ২৫ জুনের ঘটনা এতটাই নৃশংস, ঠিক গত বছর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজেও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। গোটা দেশ এই নিয়ে উত্তাল হয়েছিল। এখন আবার আইন কলেজে, যেখান থেকে আইনজীবী, বিচারক তৈরি হয়, সেই প্রতিষ্ঠানে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে এ ঘটনা আরও লজ্জাজনক।

আমরা গিয়ে দেখেছি, বাংলায় নারীদের উপর অত্যাচার ও অপরাধের হার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। বহু ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে পুলিশ এফআইআর নেয়নি। কেউ অভিযোগ করতে গেলেও শোনা হয়নি। কোনওভাবে এফআইআর নিলেও তদন্তে গাফিলতি।

এমন বহু মামলা পড়ে আছে, যেখানে আজও ন্যায় মেলেনি। আমরা ধারণা করিনি যে ঘটনাস্থলে যেতে বা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব না। দিল্লি থেকে যাওয়ার আগেই বলেছিলাম, আশা করি মমতা দিদি আমাদের যেতে দেবেন। প্রথমে আমরা কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করি। প্রথমে উনি দেখা করতে অরাজি ছিলেন। পরে দেখা করেন। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।

কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়, এই ৪৫ বছরের পুলিশ জীবনে প্রথমবার দেখলাম, এক নির্যাতিতার হাতে লেখা অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের নাম পুলিশ কেটে ‘J’, ‘M’, ‘P’ ইত্যাদি অক্ষর বসিয়ে দিয়েছে। মিডিয়াতেই অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ হয়েছিল। প্রধান অভিযুক্তের নাম সবাই জানে।

এভাবে পুলিশের নাম মুছে দেওয়া জীবনেও দেখিনি। এমন কাজ পুলিশ না করলে সম্ভব নয়। যে পুলিশ এফআইআর-এ পরিবর্তন করে, সে কখনও নির্যাতিতাকে ন্যায় দিতে পারে না। পুলিশের কথামতো, প্রধান অভিযুক্তের নামে ২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ১১টি মামলা। ৪ বার গ্রেফতারও হয়েছে। তবুও তাকে ফের ওই ল’ কলেজে কাজ দেওয়া হয়।

কলেজের স্টাফ, এমটিএস, গার্ড নিয়োগেও কারা জড়িত? দক্ষিণ কলকাতার ওই ল’ কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান স্থানীয় বিধায়ক আশোক দেব। তারই ইচ্ছায় প্রধান অভিযুক্তকে সেখানে চাকরি দেওয়া হয়।

একজন দাগী তৃণমূল ছাত্রনেতা, ক্যাম্পাসের গুন্ডা। এই ঘটনার সঙ্গে আরও তিনজন জড়িত — দু’জন ছাত্র ও এক গার্ড। এফআইআর বদলের ধরন দেখে মনে হচ্ছে আরও কেউ থাকতে পারে। পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না। আমরা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। পুলিশের দেওয়া নম্বরে ফোন করি। কেউ উত্তর দেয়নি। এসএমএস করলেও সাড়া আসেনি। বলা হয়, পুলিশি নিরাপত্তায় আছে। কোথায়, তা কেউ জানে না।

আমাদের সুপারিশ — এটি পুলিশের ও রাজ্য প্রশাসনের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা। বাংলার আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। হত্যাকাণ্ড, গণধর্ষণ, লুট, দাঙ্গা— এ সব নিত্যদিনের ঘটনা। অধিকাংশ অপরাধী তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ। প্রশাসন ও পুলিশ এদের রক্ষা করে। ভোটের সময়ও এরা সন্ত্রাস চালায়। সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। মিডিয়া পর্যন্ত চুপ। ভোটারদের বাধ্য করা হয় তৃণমূলকে ভোট দিতে।

আমরা দাবি করছি— অভিযুক্তদের নাম এফআইআর -এ মুছে ফেলার কারণ তদন্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ, উচ্চপর্যায়ের বা কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত করতে হবে। শুধু এই ঘটনা নয়, মেডিক্যাল কলেজ, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দাগী তৃণমূল কর্মী নিয়োগ ও অপরাধের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে, নারী নির্যাতনের এফআইআর নথিভুক্তি ও তদন্ত ডিএসপি স্তরের আধিকারিককে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যারা দায়িত্বে গাফিলতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মমতা দিদির সরকার যদি বাংলার বোন-মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে তাদের শাসন করার নৈতিক অধিকার নেই। আমাদের সুপারিশ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ করা উচিত।”

এরপর বিপ্লব দেব বলেন, একজনের বিরুদ্ধে এত অপরাধ থাকা সত্ত্বেও চাকরি কে দিল? অশোক দেব, তৃণমূল বিধায়ক। নিরাপত্তার দায়িত্ব সানফ্লাওয়ার এজেন্সির, সেটিও তৃণমূল নেতাদের। তারাই ধর্ষণের জায়গা নির্ধারণ করেছিল। তাই পুরো ঘটনা তৃণমূল স্পন্সরড।

যারা এই নিয়োগ করেছে, তাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। ধর্ষণের ঘটনায় একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে এক বিশেষ গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলাকে দুষ্কৃতীদের বাংলায় পরিণত করেছেন। এই ধর্ষণ ও হিংসা রাজ্য স্পন্সরড। এর দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আপনার পদত্যাগ করা উচিত।

মানন মিশ্র বলেন, এফআইআর-এর আসল কপিতে অভিযুক্তদের নাম কেটে ‘J’, ‘P’ বসানো হয়েছে। পুলিশের সামনেই সেই এফআইআর দেখিয়ে বলা হয়েছে। পুলিশের এই কাজ কেন? কমিশনার জানালেন — এফআইআর আদালতে সিলবন্দি? উত্তর নেই। দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও কেন্দ্রীয় এজেন্সি লাগানো হোক। সেই অনুরোধ আমরা জানিয়েছি।

নির্যাতিতা কোথায়, তার খোঁজ নেই। আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি পরিবারের সঙ্গে। পুলিশের কাছে সঠিক তথ্য নেই। যেভাবে দ্রুত অভিযুক্তকে ধরা হল, তা সন্দেহজনক। তার উপর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। এগুলো নিয়ে দিল্লিতে রিপোর্ট জমা পড়েছে। তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *