আমাদের ভারত, ২৫ এপ্রিল: “ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির রাক্ষস-দাম্পত্য ধর্মকেও দূষিত করে তোলে।” সামাজিক মাধ্যমে এ বিষয়ে নিজের মন্তব্য করে বিতর্কের মুখে পড়লেন প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডঃ পবিত্র সরকার। তাঁর পোস্টে শুক্রবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ১১০টি মন্তব্য এসেছে।
তিনি লিখেছেন, “নাস্তিকতা অনেক ভালো; তা কোনও ধর্মকেই মানে না বটে, তাই কোনও ধর্মের মানুষের দিকে আঙুল তুলে বলে না যে, ওরা তোমার শত্রু, ওদের তোমাকে ধ্বংস করতে হবে। ধর্মের মধ্যেই অন্য ধর্মকে অস্বীকার করার একটা সূত্র আছে। তাই ধর্মান্তরণ ধর্মে বৈধ, ধর্ম নিজেকে বিস্তার করতে চায়। নাস্তিকতার এই সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য নেই।”
একটি প্রতিক্রিয়ার জবাবে পবিত্রবাবু লিখেছেন, “আমি ঈশ্বর মানার কোনও যুক্তি খুঁজে পাইনি।” বাণিপ্রসাদ মুখার্জি লিখেছেন, “ধর্ম মানিনা অথচ ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিয়ে আদিখ্যেতা এটাইতো সমস্যা। মৌলিক প্রতিবাদ কোথায়?”
শুভমানস ঘোষ লিখেছেন, “যে ধর্মের কথা বলছেন স্যার ওটা ধর্ম নয়, ধর্মমত, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। আসল ধর্ম গুরুর কাছে প্রাপ্ত দীক্ষা সাধনের মধ্যেই লভ্য। তা একনিষ্ঠ ভাবে সাধন করে মানুষ পূর্ণতা লাভ করে। দেবত্ব লাভ করে। হিন্দু-ইসলাম সহ সব ধর্মে তলে তলে তার সাধন হয়। যাঁরা সে সুধা লাভ করেছেন, তাঁরাই পারেন ধর্মমতের নামে এই হানাহানি-কাটাকাটি বন্ধ করতে। সিদ্ধ পুরুষ কাকে বলে দেখেননি বলে, কিছুই জানেন না বলে মানুষ নাস্তিক হয়। তাঁরা কী করবেন? জগতের রহস্যের কণামাত্র না জেনে কিছু করতে গেলে আরও সমস্যা পাকিয়ে উঠবে।”
জবাবে পবিত্রবাবু লিখেছেন, “সিদ্ধপুরুষ কাকে বলে তা আমি দেখিনি, শুভমানস। মানুষ দেবত্ব লাভ করতে পারে বলেও আমি বিশ্বাস করি না। হয়তো তোমার তুলনায় আমার জ্ঞান সীমাবদ্ধ।”
শুভমানস লিখেছেন, “আমি দেখেছি। দেখেছি বলেই সবলে বলতে পারছি। আমার জীবন তাঁদের আশীর্বাদে সিক্ত। আপনি সারাজীবন সৎ কাজ করেছেন। তাঁদের আশীর্বাদ আপনিও পেয়েছেন। শুধু দেখা হওয়াটা বাকি।” জবাবে পবিত্রবাবু লিখেছেন, “পূর্ণতা, সুধা এ সব অস্পষ্ট কথা। অনেক জেনেও মানুুষ নাস্তিক হতে পারে, কিন্তু ধর্মান্ধ হওয়ার জন্যে কিচ্ছু জানতে হয় না।”
শুভমানস লিখেছেন, “প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ব্যক্তি না জেনেই ধর্মান্ধ। মানুষের ধর্ম আনন্দলাভ। তা অনাবিল ও চিরস্থায়ী করতে গভীর ধ্যানের প্রয়োজন। মহাবিশ্ব যে কী আনন্দ-তরঙ্গে থরথর করে কাঁপছে, যিনি জেনেছেন, তারই অন্তর-নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বিশ্বরহস্য তাঁরই অবগত হয়।”
সুমন সরকার লিখেছেন, “ওই দিন আপনি কেনো ছিলেন না ওদের সামনে এটাই আমার জিজ্ঞাসা আপনাকে! তাহলে আপনি ওদের নাস্তিকতার পাঠ দিতেন আর ওরা আমাকে কাফেরের পাঠ…. তারপর সোজা ৭২ হুরের দর্শন….
আর কত চাটবেন…. বয়স তো হলো? দুটো চোখ এখন ৪টে হয়ে গেছে তবুও চাটাচাটি বন্ধ হলো না আপনাদের।”
অনেকে সমর্থনও করেছেন। অর্পিতা ভট্টাচার্য লিখেছেন, “স্যার কি সুন্দর বললেন ধর্ম ও রাজনীতির রাক্ষস দাম্পত্য!” সুশান্ত দাস লিখেছেন, “সুন্দর বাক্য বিন্যাস; কথাটি ভয়াবহ।” প্রথমা রায় মন্ডল লিখেছেন, “সম্পূর্ণরূপে সহমত জানাই। প্রচলিত ধর্মানুসারী/আস্তিক মানুষ, কখনো নির্বিশেষ মানবতায় আস্থাশীল হতে পারে না। নাস্তিক হওয়া একটি বড় সাধনা।”
প্রবীর বিকাশ সরকার লিখেছেন, “ধর্ম ধর্ম করে আমরা ধর্মের সত্যিকার মানবিক আবেদনকেই অস্বীকার করছি, করছি কলুষিত। মাসুদ করিম লিখেছেন, “ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশভাগ, ধর্মই রাজনীতিকে এবং রাজনীতিই ধর্মকে শেষ করে দিল।”