আমাদের ভারত, ৬ ফেব্রুয়ারি: উত্তরাখন্ড বিধানসভায় পেশ হয়ে গেল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল। সে রাজ্যের বিজেপি সরকার এই বিল পেশকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই অভিহিত করেছে। ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখন্ড সরকার এই বিল বিধানসভায় পেশ করল। এখানে একাধিক বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। বিবাহ সম্পত্তির উত্তরাধিকার দত্তক গ্রহণের মত বিষয়গুলিতে সকলের জন্য একই আইন চালু করার পথে আরো একধাপ এগুলো এই রাজ্যটি।
এই বিলে বলা রয়েছে যদি কোনো যুগল একত্রে অর্থাৎ লিভ ইন করতে চান তাহলে অবশ্যই পুলিশ এবং জেলা আধিকারিকের অনুমতি নিতে হবে, এবং ঘোষণা পত্রের নিবন্ধন করতে হবে। লিভ ইন করার ক্ষেত্রে যুগলের বয়স ২১ বছরের নিচে হলে তাদের বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন হবে।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। সে কমিটির ওপর দায়িত্ব ছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া তৈরি করার। কমিটির সুপারিশ মেনে খসড়া বিল পেশ হয় পুষ্কর ধামীর মন্ত্রিসভায়। রবিবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পর সেই বিল বিধানসভায় পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ধামী।
এই বিল আইনে পরিণত হলে ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে বলে মনে করেছে পদ্ম শিবির। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বহুবিবাহ। যে কোনো ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম বলবৎ হবে। এরফলে মুসলিমদের বহু বিবাহ বন্ধ হবে। নিয়ম ভাঙলে কঠোর শাস্তি হবে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৮, ছেলেদের ২১ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিবাহ বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিলে। কোনো যুগল লিভ ইন করতে চাইলে প্রথমেই তাদের নাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। লিভ ইন সম্পর্কে ঘোষণাপত্র সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে। প্রয়োজনে দেখাতে ব্যর্থ হলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে। লিভ ইন সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয় তবে শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে। কেউ যদি লিভ ইন সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে ব্যর্থ হন তবে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে।
বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রাজ্যের সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করা হয়েছে। কুলিং অফ পিরিয়ডে থাকতে হবে। সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়মও সহজ করা হয়েছে। বাবা মায়ের সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে সমান অধিকার থাকবে, দত্তক সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম থাকবে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির বিধায়কদের জয় শ্রীরাম ভারত মাতা কি জয় স্লোগানের মুখরিত হয়ে ওঠে বিধানসভা। বিলকে স্বাগত জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস, তবে সরকারের বিল পেশ করার পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে তারা। রাজ্যে বিরোধী দলনেতা বলেছেন সরকার কোন আলোচনা ছাড়াই এই বিল পাশ করাতে চায়, যা একদমই ঠিক নয়।
উত্তরাখণ্ডে এই বিল পেশ হবার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দাবি উঠেছে গোটা দেশে এই আইন চালু করার। গত বছরের শেষের দিকে দেশজুড়ে এই আইন চালুর পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদীও।